সারাদেশে গত বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) শিক্ষক দিবস। দেশে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় দিবসটি। ‘শিক্ষকদের হাত ধরেই শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর শুরু’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি উদযাপন করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) জাতীয় পর্যায়ে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের পাশাপাশি বিভাগীয় শহর এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়েও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। সফলভাবে আয়োজনের অংশ হি সেবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসাসহ সব স্তরের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে।
এজন্য মাউশি থেকে ১৮টি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো :
১. শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব দপ্তর ও তাদের আওতাধীন জেলা উপজেলা পর্যায়ের সব অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ দাপ্তরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখে আগামী ২৭ অক্টোবর শিক্ষক দিবস উদযাপনের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
২. শিক্ষক দিবস-২০২২ উদযাপন আয়োজনটি সর্বাঙ্গীনভাবে সফল করার লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। আয়োজনটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের করতে প্রয়োজনে আরও একাধিক সদস্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
৩. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক ও উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) সংশ্লিষ্ট অধ্যক্ষ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটির সাথে আলোচনা করে অঞ্চলসমূহের শিক্ষক দিবস ২০২২ উদযাপন অনুষ্ঠান সার্বিকভাবে সমন্বয় ও তদারকি করবেন।
৪. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র্যালি আয়োজনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে।
৫. মহানগরে অবস্থিত থানাসমূহ মহানগরীর আয়োজনে অংশগ্রহণ করবে এবং মহানগরের বাইরে অবস্থিত উপজেলাসমূহ উপজেলা পর্যায়ের অনুষ্ঠান উদযাপন করবেন।
৬. সব স্তরের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসা) কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের আদলে বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করতে হবে। কেন্দ্র হতে সরবরাহকৃত (ব্র্যাকের সহযোগিতায়) নির্ধারিত ডিজাইনের ব্যানারে জেলা ও উপজেলার নাম সংযোজন নিশ্চিত করতে হবে। ব্যানারের ডিজাইন অপরিবর্তিত রেখে আকার পরিবর্তন করা যেতে
পারে।
৭. বিভিন্ন পর্যায়ে যে সব শিক্ষক শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করেছেন তাদের সম্মান প্রদর্শনপূর্বক র্যালির প্রথম সারিতে রাখা যেতে পারে এবং কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাইলে নিজ উদ্যোগে তাদের প্রতিষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন ও সম্মাননা (উপহার, ক্রেস্ট,সার্টিফিকেট) প্রদান করতে পারে।
৮. র্যালিটি বর্ণাঢ্য করার জন্য কেন্দ্র হতে সরবরাহকৃত ডিজাইনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড তৈরি করতে পারে।
৯. র্যালিটি সুশৃঙ্খল করার জন্য স্কাউট, বিএনসিসি ও গার্ল গাইডস এর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
১০. প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগে র্যালির পর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ‘শিক্ষকদের হাত ধরেই শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর শুরু’ শিরোনামে আলোচনা সভার আয়োজন করা যেতে পারে।
১১. র্যালি আয়োজন ও অন্যান্য কর্মসূচি উদযাপন এর ক্ষেত্রে ICT4E অ্যাম্বাসেডর শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
১২. শিক্ষক দিবস উপলক্ষে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে বা সুবিধাজনক স্থানে ৩টি (১টি ফলদ, ১টি বনজ ও ১টি ভেষজ ) গাছের চারা রোপণ করতে হবে।
১৩. দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে রেড ক্রিসেন্ট/সন্ধানী/বাঁধন এ সব সংস্থার মাধ্যমে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা যেতে পারে।
১৪. র্যালি অনুষ্ঠানটি বর্ণাঢ্য করার জন্য দেশীয় সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যান্ড, সংগীত, নাটিকা উপস্থাপন করা যেতে পারে।
১৫. র্যালি ও আলোচনা সভার স্থির চিত্র ভিডিও সংরক্ষণ করতে হবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র্যালি এবং এতদসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম স্থানীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৭. জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব আয়োজনে স্থানীয় পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে।
১৮. এ আয়োজনে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। নিজস্ব উদ্যোগে এ আয়োজন সম্পন্ন করতে হবে। শিক্ষক দিবস ২০২২ উদযাপনের জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে কোনো ধরনের চাঁদা গ্রহণ করা যাবে না, তবে কোনো শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করতে চাইলে তা গ্রহণ করা যেতে পারে।
অন্যদিকে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় দিবস হিসেবে শিক্ষক দিবস উদযাপন করায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরাও।
রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শামিম আরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষক দিবস উদযাপনের বিষয়টি জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এরমধ্য দিয়ে শিক্ষক হিসেবে সামাজিকভাবে সবার কাছে আমদের মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা আরও বৃদ্ধি পেল। এই সিদ্ধান্তের নেওয়ার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।