যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। তবে সরকার প্রতি পদে পদে রাষ্ট্রযন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এতে বাধা দিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরে পুরো রাষ্ট্রকাঠামো দলীয়করণ করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। গত দুটি নির্বাচন প্রহসনে পরিণত করে বেআইনিভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। সরকার ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের সকল সংকট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। জনগণের সরকার গঠন না হলে দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সংকট নিরসন সম্ভব হবে না।
এ জন্য বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে এক দফার দাবি তুলে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। সরকার প্রতি পদে পদে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বাধা দিয়ে এসেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মহাসমাবেশের উদ্দেশ্য সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। কমিশন বলছে, পরিবেশ নেই। এরপরও নির্বাচন করার কথা বলছে…। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকার প্রয়োজন। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে যায় না। অথচ সরকার চায় একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় যেতে।
ফখরুল অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বললেও প্রতিদিন সরকারের দমন-নিপীড়ন বেড়েই চলেছে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করছে। বিরোধীদলের নেতারা যাতে নির্বাচন করতে না পারে সেজন্য সাজা দিচ্ছে। সরকারের দমননীতি চালিয়ে জোর করে নির্বাচনের চেষ্টা, হাস্যকর প্রহসন-তামাশা ছাড়া কিছু নয়।
দেশের মানুষ নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বহু নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করছি। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে গ্রেফতার চালাচ্ছে। সরকারের সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো ইচ্ছে নেই। আবারও একতরফা নির্বাচনের জন্য সরকার সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এবার আর সেটা সম্ভব হবে না।
২৮ তারিখের মহাসমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও অনুমতি মেলেনি, আশা করছি সরকার বাধা দেবে না। এ সময় জনগণের ভোটের অধিকার, মৌলিক অধিকার রক্ষায় সমাবেশে যোগ দিয়ে সরকারকে ‘না’ বলে দিতে সারাদেশের সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অত্যাচার-নিপীড়নের পর জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এখনও আশা করছি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। বিএনপির আহ্বান, সবাই এগিয়ে আসুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে সংকটের সমাধান করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। ন্যূনতম মজুরির জন্য গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। সরকার সেটাও দমাতে চাইছে। সরকার যদি কোনো বাড়াবাড়ি করে তাহলে তার পরিণতি কিছু হলে, এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। সরকার লাঠি নিয়ে সমাবেশে আসার কথা বলছে, অর্থাৎ সরকার উস্কানি দিচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশি চিকিৎসকরা সফলভাবে খালেদা জিয়ার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন। তিনি সিসিইউতে আছেন। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।