মুসলমানদের কাছে লাইলাতুল কদর এক বরকতময় ও মহিমান্বিত রাত। এই রাতে আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিম নাজিল করেছেন এবং এই রাতের নামে আল্লাহ তাআলা একটি সুরা নাজিল করেছেন। এই রাতের মর্যাদা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মুসলিম রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদরের ইবাদত করেন। তবে ২৭ রমজানের রজনি বিশেষভাবে পালিত হয়।
গত রাতে বিশ্বের মসজিদগুলোতে হাজির হয়ে মহান প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন কোটি কোটি মুসলিম। এই রাতে মুসলিমরা মহান প্রভুর কাছে ক্ষমার আকুতি জানান। মুসলিমদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে আকাশ।
মক্কার কাবা প্রান্তরজুড়ে লাখ লাখ মুসল্লি শবে কদরের রাতে ইবাদত বন্দেগিতে শামিল হন। কাবা প্রান্তর ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তাঘাটও মুমিন বান্দায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় পবিত্র মসজিদে মদিনার মসজিদে নববিতেও লাখো মুসল্লি এই রাতে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ইসলামের তৃতীয় পবিত্র মসজিদুল আকসায় শবে কদরের রাতে জড়ো হন দুই লাখ ৮০ হাজারের বেশি মুসল্লি। রাতভর তারা ইবাদত বন্দেগিতে কাটান। এছাড়া বিশ্ব মুসলিমের মুক্তি কামনায় মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।
তুরস্কের বিখ্যাত মসজিদ হায়া সোফিয়ায় হাজার হাজার মুসলিম শবে কদরের রাতে নামাজ আদায় করেছেন। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মসজিদগুলো যেন এই রাতে জীবন্ত হয়ে ওঠে। আরশের মালিকের কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের সাহায্য কামনা করেন তারা।
লাইলাতুল কদর ও এর ফজিল
লাইলাতুন শব্দের অর্থ রাত, রজনী। ফারসিতে একে শব বলা হয়। আর কদরের অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। এর সম্মানের কারণে একে লাইলাতুল কদর বলা হয়। আবু বকর ওয়াররাক (রহ.) বলেন, এ রাত্রিকে লাইলাতুল কদর বলার কারণ এই যে আমল না করার কারণে এর পূর্বে যার কোনো সম্মান ও মূল্য থাকে না, সে এ রাতে তাওবা ইসতেগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে সম্মানিত হয়ে যায়। কদরের আরেক অর্থ তাকদির ও আদেশ। কারণ এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি নিজ নিজ দায়িত্বে নিযুক্ত ফেরেশতার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদি ফেরেশতারা কে লিখে দেওয়া হয়। এমনকি এ বছর কে হজ করবে—তাও লিখে দেওয়া হয়।
তাফসিরে কুরতুবির লেখক এ বিষয়ে একটি হাদিস উল্লেখ করেন, আব্বাস (রা.) বলেন, ইসরাফিল, মিকাইল, মালাকুল মউত ও জিবরাইল (আ.)-কে এসব কাজ দেওয়া হয়।
তাফসিরে মাজহারিতে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা সারা বছরের তাকদিরসংক্রান্ত বিষয়াদির ফায়সালা শবেবরাতে সম্পন্ন করেন আর শবেকদরে এসব ফয়সালা নিজ নিজ ফেরেশতাদের দ্বারা হস্তান্তর করা হয়।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কদরের রাতে ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে নামাজ পড়ে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি, মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় আছে, ভবিষ্যতে সব গুনাহও মাফ করে দেওয়া হয়। উবাদা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কদরের রাতের অন্বেষণে সেই রাতে নামাজ পড়ে এবং তা পেয়ে যায়, তার অতীত ও ভবিষ্যতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (নাসাঈ)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানে এমন এক রাত আছে, যার ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। যে এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে অবশ্য বঞ্চিতের কাতারে আছে। (নাসাঈ ও মুসনাদ)