মঙ্গলপৃষ্ঠে গত শনিবার গভীর রাতে অবতরণের পর মঙ্গলযান তিয়ানওয়েন-১ থেকে লালগ্রহের মাটিতে পা দিল চীনের প্রথম মার্স রোভার ঝুরং। সাথে সাথে মহাকাশ গবেষণায় বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির তালিকায় জুড়ে গেল ড্রাগনের দেশের নাম। ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে আসার পর কাজ শুরু করে দিয়েছে ঝুরং। তুলেছে ছবিও। চীনের মহাকাশ সংস্থা চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনএসএ) সেই ছবিও প্রকাশ করেছে।
গত বছরের ২৩ জুলাই অরবিটর, ল্যান্ডার এবং রোভারকে নিয়ে মঙ্গলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল তিয়ানওয়েন-১। গত ফেব্রুয়ারি থেকেই মঙ্গলের কক্ষপথে পাক খাচ্ছিল সেটি। তিন মাস চক্কর কাটার পর জঠরে থাকা সন্তানতুল্য রোভারকে নিয়ে ‘আতঙ্কের সাত মিনিট’ কাটিয়ে গত ১৫ মে প্যারাশুট বাঁধা অবস্থায় মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করে এই ল্যান্ডার। পূর্ব নির্ধারিত উত্তর হেমিস্পিয়ারে অবস্থিত ‘ইউটোপিয়া প্ল্যানিশিয়া’ অঞ্চলেই নামে সেটি।
এক সপ্তাহের মাথায় ল্যান্ডার থেকে বেরিয়ে এল ২৪০ কেজি ওজনের নীল প্রজাপতি— ঝুরং রোভার। চীনের উপাস্য পৌরাণিক অগ্নিদেবতার নামানুসারে এর নামকরণ। ল্যান্ডার থেকে র্যাম্প খুলে যেতেই ছ’চাকায় ভর করে মঙ্গলের মাটিতে পা দেয় ঝুরং। সেই রোভারের পাঠানো প্রথম ছবিতে দেখা গিয়েছে, গায়ে সেঁটে থাকা সোলার প্যানেলকে নিয়ে লালগ্রহের রুক্ষ জমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটি। রোভারটিতে রয়েছে টেরেন ক্যামেরা, মাল্টি-স্পেক্ট্রাল ক্যামেরা, মঙ্গলপৃষ্ঠ পরীক্ষার জন্য রেডার, সারফেস কম্পজিশন ডিটেক্টর, ম্যাগনেটিক ফিল্ড ডিটেক্টর এবং আবহাওয়া মনিটরের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। অন্তত ৯০টি মঙ্গল দিবস সেখানে ঘুরে বেড়াবে ঝুরং। এই দীর্ঘ সময়ে নানা নমুনা সংগ্রহ করবে সেটি। খতিয়ে দেখবে মঙ্গলপৃষ্ঠের ভৌগোলিক গঠন। করবে জল ও বরফের সন্ধান। পাশাপাশি লালগ্রহের আবহাওয়া নিয়ে রোভারটি পরীক্ষা চালাবে। যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে আসে, তবে সেটি বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করবে জুরং, সিএনএসএ’কে উদ্ধৃত করে চীনের সরকারি সংবাদসংস্থা জিনহুয়া একথা জানিয়েছে।
এর আগে চাঁদে ‘ইউতু’ নামে একটি রোভার পাঠিয়েছিল চীন। সেই রোভারের মতোই ঝুরং প্রতি ঘণ্টায় ২০০ মিটার গতিতে দৌড়তে পারে। তবে এর উচ্চতা ২০ সেন্টিমিটার থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয়েছে। ঝুরংয়ের প্রতিটা চাকাই স্বয়ংক্রিয় এবং রিভলভিং। ঘুরতে পারে ৩৬০ ডিগ্রি। ফলে রোভারটি যে কোনও বাধা টপকাতে সক্ষম। কাঁকড়ার মতো একপাশে ভর দিয়েও দৌড়তে পারে। সোলার প্যানেল দু’টিও এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ধুলো না জমতে পারে। ঠিক যেমন পদ্মপাতায় পানি পড়লে তা দাঁড়াতে পারে না। স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি অনুযায়ী ঝড়ের তীব্রতা বুঝে কাজ করবে রোভারটি। প্রয়োজনে ‘স্লিপ মোড’-এও চলে যাবে। আবার সোলার প্যানেলে যথাযথ রোদ এসে পড়লেই জেগে উঠে কাজ শুরু করবে। এই অত্যাধুনিক রোভার তৈরি করতে তারা প্রচুর গবেষণা করেছেন বলে জানিয়েছেন মঙ্গলযানের ডেপুটি চিফ ডিজাইনার জিয়া ইয়াং। অন্যদিকে, তিয়ানওয়েন ১-এর অরবিটর এক মঙ্গলবর্ষ অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে ৬৮৭ দিন ধরে রোভারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলবে এবং চীনকে গবেষণা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাঠাবে।