আটক নেহাল আহমেদ জিহাদ সদর উপজেলার দক্ষিণ ইসলামপুর গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে। মামলার পরে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল শুক্রবার (৯ মে) রাত ৮টার দিকে লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ ঘাটে নোঙর করে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভাঙচুরের খবর পেয়ে সেখানে যান তারা। পরে ভেতরে ঢুকে বেশ কিছু দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করেন এবং মারধরের শিকার তরুণীদের সাথে কথা বলে ফিরে আসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, লঞ্চটি ঢাকা-লালমোহন রুটের প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। লঞ্চটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার বেশ কয়েকটি কেবিনে ২০-২৫ জন কিশোর-যুবক ও দুই তরুণী ছিলেন। তারা ঢাকা থেকে ওই লঞ্চের কেবিন ভাড়া করে সারাদিন পিকনিক করে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা রঙের পোষাক পরিহিত এক তরুণীকে লঞ্চের একেবারে সামনের অংশে উঠিয়ে বেল্ট দিয়ে বেপরোয়াভাবে পেটাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ শহরের নেহাল আহমেদ জিহাদ নামে একজন। এ সময় ৫০-৬০ জন বিভিন্ন বয়সী পুরুষ সেই দৃশ্য তাদের মোবাইল ফোনে ধারণ করে উল্লাস করছেন ও বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারধরকারী নেহাল আহমেদ জিহাদ বলেন, স্থানীয় কয়েকশ লোক তাদের আচরণ ও বেশভূষায় পতিতা বলে আখ্যায়িত করে ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমণ করতে চলে আসে। আমি তাদের নিবৃত্ত করতে ভাই হিসেবে শাসন করেছি। এটা আমার করা উচিত হয়নি। আবার আমি এটা না করলে মানুষজন আরও বেশি হেনস্তা করতো। তাছাড়া স্থানীয়দের কাছ থেকে অন্তত ৮টি মোবাইল আমি তাদের উদ্ধার করে দিয়েছি। আমি মারধরের ঘটনায় অনুতপ্ত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া এ ঘটনার একাধিক ভিডিওতে আরও দেখা যায়, থেমে থাকা লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় উঠে গণহারে কিশোর যাত্রীদের পেটাচ্ছেন ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল। এ সময় তারা লঞ্চের কেবিনগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছেন এবং দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌ-ভ্রমণে বের হয়ে আক্রমণের শিকার ‘এমভি ক্যাপ্টেন’ নামের লঞ্চটিতে পিকনিকের উদ্দেশ্যে আসা অন্তত ৬ জন যাত্রী মারধরে আহত হন। এর মধ্যে দুইজন তরুণী। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে- তারা সবাই ঢাকার কামরাঙিরচর এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া লঞ্চটিতে অন্তত ৩০০ জন সাধারণ যাত্রী ছিলেন। তাদের সাথে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও স্থানীয়দের উত্তেজনা দেখে তারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম জানান, লঞ্চে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে আটক করা হয়েছে। আমাদের সাথে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছে। তারা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে। মামলা দায়ের শেষে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে নাস্তা কেনার জন্য ৮ থেকে ১০ জন নারী যাত্রী লঞ্চ থেকে পন্টুনে নামেন। সেখানে থাকা স্থানীয়রা মাদকসেবী ও পতিতা সন্দেহ করে তাদের পিছু নিয়ে লঞ্চে ওঠার চেষ্টা করলে লঞ্চের ম্যানেজার মো. শফিক তাদের প্রবেশে বাধা দেন। এতে উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়ে লঞ্চে ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট ও যাত্রীদের মারপিট করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজনা কমে আসে।
মুক্তারপুর নৌ পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান বলেন, শুক্রবার ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সাথে আমরাও ছিলাম। মারধরের ঘটনার পর আমরা লঞ্চটিকে অনেকদূর পর্যন্ত পাহারা দিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসি।