লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল নৌরুটের মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চ ও ফেরিঘাটের ইজারা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। তিন দিন ধরে ইজারাদার দুটি গ্রুপ ঘাট এলাকায় বহিরাগতদের নিয়ে অবস্থান নিয়েছে। একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে শক্তির মহড়াও দিচ্ছে। তারা চাঁদপুরের বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক কায়সারুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা পরিষদের ইজারাদার ইসমাইল হোসেন পাঠানের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
এদিকে সহিংসতা এড়াতে শনিবার (৩ জুলাই) লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ সভা করেছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় ঘাটের মালিক দাবিদার লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা এবং দুই পক্ষের ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে সভায় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ঘাটটি জেলা পরিষদের মালিকানা ও ইজারা বৈধ বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ আন্তঃমন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত ও বৈধ কাগজপত্রের দাখিল করলে জেলা পরিষদের মালিকানা হস্তান্তর করারও সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিআইডব্লিউটিএ’র ইজারাদার পক্ষ ক্ষুব্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের মাধ্যমে ৯০ লাখ টাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থক সদর উপজেলার বাঞ্চানগর এলাকার ইসমাইল হোসেন পাঠানকে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ ইজারা দেয়। সম্প্রতি ইসমাইলকে ঘাটও বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ২০১৭ সালে মজুচৌধুরীর হাট ঘাটটি নৌ-বন্দর হিসেবে গেজেটভুক্ত হওয়ায় নিয়মানুযায়ী ঘাটের দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএর। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ ঘাটের ইজারা দিয়ে আসছে। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে জন্য নদী বন্দরের আওতায় লঞ্চ-ফেরি ঘাট, পার্কিং ইয়ার্ড ও শুল্ক আদায়ের জন্য ৫৪ লাখ টাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থক সদরের নুরুল্যাপুর গ্রামের শিমুল চক্রবর্তীকে ইজারা দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জানায়, জেলা পরিষদ এবং বিআইডব্লিউটিএ থেকে আলাদা ইজারা নেওয়া দুই ব্যক্তির পক্ষ নিয়েছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুটি গ্রুপ। উভয়পক্ষের সঙ্গে সাবেক কয়েকজন ছাত্র নেতারাও সম্পৃক্ত। ঘাট নিয়ে যেন দুই পক্ষই শক্তির মহড়ায় নেমেছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা পরিষদের ইজারাদার ইসমাইল হোসেন পাঠান বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ সঠিক নয়। তার সঙ্গে কয়েকজনের কথা কাটাকাটি হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র ইজারাদার শিমুল চক্রবর্তী বলেন, আমাদের ঘাটটি নৌ-বন্দর হিসেবে গেজেটভুক্ত হওয়ায় এটির মালিকানা বিআইডব্লিউটিএর। আমি বৈধভাবে বিআইডব্লিউটিএ থেকে ইজারা নিয়েছি। এখন পেশিশক্তি আর খামখেয়ালিভাবে জেলা পরিষদ তামাশা করছে। এ বিষয়ে আমি উচ্চ আদালতে যাব।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, এ ঘাটটির মালিকানা আমাদের। বৈধভাবে এটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ লকডাউনের মধ্যে চাঁদপুরের বিআইডব্লিউটিএ’র ডিডি ঘাটে আসায় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে হানাহানি এড়াতে আমি পুলিশ পাঠিয়েছি। বিআইডব্লিউটিএ যদি মালিকানার বৈধ কোনো আদেশ আনতে পারে, তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, মজুচৌধুরী ঘাটের মালিকানা নিয়ে জেলা পরিষদ এবং বিআইডব্লিউটিএ’র মধ্যে বিরোধ রয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি এড়াতে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা করা হয়েছে। সভায় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ঘাটটি জেলা পরিষদের মালিকানা ও ইজারা বৈধ বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ আন্তঃমন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত ও বৈধ কাগজপত্রের দাখিল করলে জেলা পরিষদ মালিকানা হস্তান্তর করে দেবে।