লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও চরপোড়াগাছা ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় গ্রামপুলিশ হিসেবে নিয়োগের পর ছাত্রদল নেতা আখ্যা দিয়ে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) রামগতি সহকারী জজ আদালতে মামলাটি করেন আবদুর রহমান নামের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি উপজেলার চরকলাকোপা গ্রামের শরাফত আলীর ছেলে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বাদীর আইনজীবী প্রহলাদ সাহা রবি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আইনজীবী প্রহলাদ সাহা রবি জানান, আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়েছেন। আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিবাদীরা হলেন ইউএনও এসএম শান্তুনু চৌধুরী, থানার ওসি আলমগীর হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন হাওলাদার ও রুবেল। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকসহ অন্য পাঁচজনকে মোকাবেলা বিবাদী করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর উপজেলার চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামপুলিশ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। গত ২ অক্টোবর ওই পদে নিয়োগ পরীক্ষায় আবদুর রহমান প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন। মামলার ৪ নম্বর বিবাদী রুবেলও পরীক্ষায় দেন। তাকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছিল।
১৯ অক্টোবর আবদুর রহমানকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ডেকে দায়িত্ব বুঝিয়ে গ্রামপুলিশের পোশাক দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক অভিযোগ আনা হয়। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বাদ দিয়ে অপেক্ষমাণ তালিকার রুবেলকে গ্রামপুলিশ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বাদীর অভিযোগ, রুবেল ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের আস্থাভাজন হওয়ায় চাকরি ভাগিয়ে নিয়েছেন। চেয়ারম্যান প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে থানার ওসিকে দিয়ে তার (আবদুর রহমান) বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করিয়েছেন। পুলিশের প্রতিবেদনে বিএনপির কর্মী ও লাঠি মিছিলে অংশ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তাকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি (আবদুর রহমান) কখনো ছাত্রদলের রাজনীতি করেননি। তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।
ছাত্রদলের এক নেতার সঙ্গে তার নাম মিল থাকায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইউপি চেয়ারম্যান পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো থানায় কোনো মামলা নেই বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, রুবেলের বিরুদ্ধে রামগতি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারী নির্যাতনের ঘটনায় ফৌজদারি মামলা (৩৭৯/২০২২) রয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন। এছাড়া একটি চুরির মামলায় রুবেল জেলও খেটেছেন। এরপরও চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে তথ্য গোপন করে তাকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
বাদী আবদুর রহমানের ভাষ্যমতে, ২০১৯ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন এবং ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। একই ইউনিয়নে ছাত্রদলের এক নেতার নাম আবদুর রহমান। ওই নামটি পুঁজি করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ন্যায়বিচার পেতে তিনি আদালতে মামলা করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘মামলার কথা শুনেছি। চাকরি না পেয়ে অভিযোগ আনলেই হবে না, তা প্রমাণ করতেও হবে। আমার বিরোধীরা ষড়যন্ত্র করছেন।’
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তবে রুবেলের বিরুদ্ধে রামগতি থানায় কোনো মামলা নেই।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শান্তনু চৌধুরী বলেন, পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এতে আমার কোনো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল না। এ ঘটনায় আদালতে লিখিতভাবে জানানো হবে।