হু হু করে বাড়তে থাকা মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সামাল দিতে, আবারও সারাদেশে আগামীকাল সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, পণ্যবাহী পরিবহনের পাশাপাশি খোলা থাকবে সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট পরিবহনও। এর বাইরে শুধু শিল্পকারখানা খোলা থাকবে। শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিফট অনুযায়ী কাজ করবেন। সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ-র্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউন আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
রাজধানী ঢাকায় এই লকডাউন কার্যকরে কঠোর থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা মাঠে থেকে লকডাউন কার্যকর করব এবং কঠোরভাবে কার্যকর করব। অনেক আর্থিক ক্ষতি হবে জেনেও সরকার লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নিল। কার্যকর না করে উপায় আছে? সুতরাং পুলিশ করোনারোধে কঠোর হবে। এজন্য জনসাধারণ যেন আমাদের সহযোগিতা করেন, সেই আহ্বান জানাচ্ছি।
একই দিনে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত বছর কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই পুলিশ মাঠে থেকে কাজ করেছে। গতবারের অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে এবার পুলিশ কাউকেই লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি বিধি লঙ্ঘনে ছাড় দেবে না। গত বছর লকডাউন চলাকালে অনেকেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ঢাকা ছেড়েছিল। তবে এবার তা হতে দেওয়া হবে না। কোভিড-১৯ এর নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ মাঠে থেকে কঠোরভাবে কাজ করবে। একের জন্য যেনো অন্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে না পড়ে যায় সেদিকটি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সাধারণ মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং লকডাউন কার্যকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজ চট্টগ্রাম রেঞ্জের আওতাধীন অন্তত ২০টি মোবাইল কোর্টের টিম মাঠে নামবে। যা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ মাঠ থেকে শুরু হবে। এ ছাড়া লকডাউন কার্যকরে পুলিশ সদর দপ্তর যে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা জানাবে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, লকডাউন কীভাবে কার্যকর হবে, সে বিষয়ে সরকার এখনও কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তবে নির্দেশনা না দিলে আগের বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর মাঠে নামবে পুলিশ। বিশেষ করে মানুষজনের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা, সড়কে চেকপোস্ট বসানো, লকডাউনে অপরাধ যেন বেড়ে না যায় এ সব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
লকডাউন কার্যকর, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে র্যাব কাজ করবে বলে জানিয়েছেন বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, সরকার আমাদের যে নির্দেশনা দিবে আমরা সেই নির্দেশনা শক্তভাবেই বাস্তবায়ন করব। আমরা আগের মতোই মাঠে থেকে কাজ করব। স্বাস্থ্যবিথি মেনে আমাদের পেট্রোলিং, চেকপোস্ট থাকবে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন কার্যকরে সামনে থেকে কাজ করবে র্যাব।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ১০-দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় ২০২০ সালের ২৬ মার্চ। পরবর্তী সময়ে ৭ দফায় এ ছুটি বাড়িয়ে ৩০ই মে পর্যন্ত বহাল রাখা হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে এই সময়টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘লকডাউন’ বলা হয়নি, বরং ‘সাধারণ ছুটি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ কার্যকর করার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত বাড়ি, জেলা-উপজেলা, পাড়া-মহল্লা ইত্যাদি লকডাউন করা হয়েছিল। গুগলের কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্ট অনুযায়ী বলা হয়, লকডাউন কার্যকরে প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রে তখনও জনসমাগম দেখা গেছে। যদিও আগের তুলনায় এসব স্থানে মানুষের চলাচল কমেছে মাত্র ২৬ শতাংশ।