করোনার ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে খাদ্য ও অর্থাভাবে ক্ষুধার তাড়নায় লকডাউনে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে বলে দাবি করছে বিএনপি। দলটি বলছে, একদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি, অপরদিকে সরকারের অপরিকল্পিত, অমানবিক ও নিষ্ঠুর লকডাউনে জনগণ এখন বেগতিক অবস্থার মধ্যে পড়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স দলের পক্ষ থেকে এসব কথা বলেন।
প্রিন্স বলেন, ‘বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের চরম ব্যর্থতায় বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিনের রেকর্ড ভঙ্গ করে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। জ্যামিতিকহারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জনগণ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। একদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি, অপরদিকে সরকারের অপরিকল্পিত, অমানবিক ও নিষ্ঠুর লকডাউনে জনগণ এখন বেগতিক অবস্থার মধ্যে পড়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে গণটিকা ছাড়া এই মহামারি মোকাবেলা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় এমন দাবি করে তিনি বলেন, সরকার নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে লাভবান করার জন্য একটি মাত্র উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে বিপাকে ফেলেছে, জনগণের জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করে তুলেছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভুল সিদ্ধান্ত, সময় মতো সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ না নেয়া, অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে অক্ষমতা এবং সার্বিক অদক্ষতা ও অযোগ্যতার জন্য পরিস্থিতি আজ লেজে-গোবরে তথা হযবরল অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, খাদ্য ও অর্থাভাবে ক্ষুধার তাড়নায় লকডাউনে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, অন্যদিকে রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে এবং জরিমানার শিকার হচ্ছে। সবমিলিয়ে মনে হচ্ছে আমরা এক হীরক রাজ্যে বসবাস করছি।
স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারের দেয়া বরাদ্দের পরিমাণ নিয়ে সমালোচনা করে প্রিন্স বলেন, সরকার করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে সহায়তার নামে যে বরাদ্দ দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা জনগণের সাথে তামাশা করা ছাড়া কিছুই নয়। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে কয়বার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা কোন সময় মাথাপিছু ১১ পয়সা, কিংবা ১৪ গ্রাম চাল। বর্তমানেও চলমান লকডাউনে যে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে তা মাথা পিছু ৭ দিনের হিসাবে ১৩ টাকারও কম। এখন বলা হচ্ছে ঈদের আগে দশ কেজি করে চাল দেয়া হবে, তাহলে ঈদের আগ পর্যন্ত এই লকডাউনে মানুষ কি খেয়ে বাঁচবে। প্রকৃতঅর্থে, এই বরাদ্দও এখন পর্যন্ত ছাড় হয়নি এবং তা জনগণের হাতে পৌঁছে নাই।
বিএনপিকে নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা তাদের ব্যর্থতা আড়াল করতে প্রতিদিনই বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। তারা নাকি দুরবিন দিয়ে বিএনপিকে খুঁজে পাচ্ছেন না। বিএনপি নাকি মিথ্যাচার করছে। এসব কথা বলে তারা দেশের যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তা থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে ব্যর্থ অপচেষ্টা করছেন, এসব অযৌক্তিক ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ সময়ে জনগণের জীবন নিয়ে চিন্তা না করে মশকরা করছেন, তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ ও মাউথ ল্যাংগুয়েজে সেটাই ফুটে উঠছে। সরকার দেশের ৬৪টি জেলায় করোনার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ কল্পে যাদেরকে দায়িত্ব প্রদান করেছিল এখনও পর্যন্ত তাদের কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি।