স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। বিশেষ করে কক্সবাজারের মানুষ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের নিচ্ছে না মিয়ানমার। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। অত্যন্ত ‘পিসফুলি’ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে রোহিঙ্গা নাগরিকরা যেন ফিরে যেতে পারেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লং বিচ হোটেলে ‘নবজাগরণ: অপরাধকে না বলুন’ শীর্ষক এক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের জায়গা ছোট, কিন্তু মানুষ অনেক বেশি। অথচ দেখেন মিয়ানমার বড় রাষ্ট্র হয়েও তাদের নাগরিকদের বিতাড়িত করছে। রোহিঙ্গার ঢল যখন নামলো তখন অনেকেই বলেছিলেন আটকে দিতে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের বললেন তোমরা সীমান্ত থেকে সরে দাঁড়াও, ওরা আসুক, ওদের আসতে দাও।
তখন প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন— তোমাদের মনে নেই, জীবন হাতে নিয়ে কয়েক কোটি লোক স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ঠিক সেই রকমই ওরা (রোহিঙ্গারা) পালিয়ে আসছে এখানে। ওদের জীবনরক্ষার সুযোগটা আমরা দিতে চাই। যদিও এখন অনেক সমস্যা হচ্ছে। তবে, আমরা চেষ্টা করছি— যাতে করে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে পারে। খুবই ‘পিসফুলি’ চেষ্টা চলছে।
এসময় র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আক্তার হোসেন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, ‘অপরাধকে না বলুন’- স্লোগান ধারণ করে অপরাধ প্রতিরোধবিষয়ক সাম্প্রতিক স্ট্র্যাটেজির আওতায় নতুন কর্মসূচি নিয়েছে র্যাব।
র্যাবের নবজাগরণ কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেসব এলাকা ভালনারেবল, জনসংখ্যা অতিরিক্ত এবং কর্মসংস্থান কম। সেখানের মানুষগুলোকে টার্গেট করছে র্যাব। তারা অপরাধে জড়িয়ে যেতে পারে, সেজন্য তাদের আলোর পথ দেখাচ্ছে র্যাব। এটা নিঃসন্দেহে একটা সাহসী উদ্যোগ।
র্যাব জনগণের আস্থার প্রতীক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গি দমনসহ যেকোনো অপরাধ দমনে এমনকি ভেজাল নিয়ন্ত্রণে র্যাবের উপস্থিতি রয়েছে। যেকোনো পর্যায়ে অপরাধীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে আমাদের। আমরা জলদস্যু ও বনদস্যুমুক্ত হয়েছি, জঙ্গিদমন করেছি। জঙ্গি শুধু দমনই নয়, জঙ্গিদের ধরেছি ও পুনর্বাসন করেছি। আমরা দেখেছি মা-ছেলেকে স্যারেন্ডার করিয়েছে র্যাব। র্যাব সেই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে। চোরাকারবারিরা যে কাজটি করছে সেটি অন্যায়, এ মেসেজটা দিতে ফোর্স প্রয়োগ করতে হয়নি। আলোর মেসেজ দিতে এটি ব্যতিক্রম কৌশল হিসেবে কাজ করছে।
আজ কক্সবাজারে নির্দিষ্ট করে কাজ করছে র্যাব। এমন একটি জায়গা এ কাজটি করছে যেখানে সবাই একবার হলেও আসতে চায়। ট্যুরিস্ট পুলিশসহ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার বাহিনী রয়েছে এখানে। সবারই একটাই উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিটা যেন ধরে রাখতে পারি।
নতুন এ কর্মসূচি ‘নবজাগরণ’ এর আওতায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বা ঝুঁকিতে থাকা ৩৬ তরুণ-তরুণীকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেয় র্যাব। এর মধ্যে হোটেল সার্ভিস বয় ছয়জন, সার্ফিং পাঁচজন, ট্যুরিস্ট গাইড প্রশিক্ষণ পাঁচজন, ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণ পাঁচজন, সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ দশজন, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় পাঁচজনকে।আজ তাদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।