সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে রোমানিয়ায় দালাল চক্রের হাতে বন্দি পাঁচ বাংলাদেশি যুবকের আর্তনাদের ভিডিও। নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে আটক যুবকদের পরিবারের কাছে দাবি করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সন্তানের মুক্তিসহ দোষীদের বিচার দাবি করেছেন স্বজনরা।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আল-আমিন নামে এক দালাল চক্রের সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। রোমানিয়ায় দালাল চক্রের হাতে বন্দি রয়েছে- মাদারীপুর ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের খাতিয়াল গ্রামের মৃত সৈয়দ সালামের ছেলে তানভীর, একই গ্রামের সাঈদ হাওলাদারের ছেলে বায়েজিদ হাওলাদার ও রাশেদ হাওলাদার, সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মিলন মিয়া ও মস্তফাপুর ইউনিয়নের সিকিনওহাটা গ্রামের মোফাজ্জেল হাওলাদার।
আটকদের পরিবারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজিরহাওলা গ্রামের জাফর বেপারীর ছেলে আল-আমিন (২৯) ও তার স্ত্রী রিনা বেগম, রাস্তি এলাকার শামিম আকন ও তার স্ত্রী মোসা. সুমি বেগম (২৮), সিরাজ আকন (৬০) ও তার স্ত্রী রানু বেগম তাদের আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগী পাঁচজনের পরিবারে কাছ থেকে ৩ আগস্ট জনপ্রতি ৮ লাখ টাকা করে নেন। এক মাসের মধ্যে ইতালিতে পৌঁছে দেয়ার কথা থাকলেও তাদের ইতালি না পাঠিয়ে রোমানিয়ায় আটকে রাখে।
বর্তমানে পাঁচ যুবককে ১৫ দিন ধরে রোমানিয়ায় কোনো এক স্থানে আটকে রেখে গত সপ্তাহে ১০ লাখ টাকা করে দাবি করে আসছে চক্রের সদস্যরা। সম্প্রতি বন্দিদের নির্যাতন ও আর্তনাদের ভিডিও ভাইরাল হলে গত বৃহস্পতিবার মাদারীপুর সদর থানায় ভুক্তভোগীদের পরিবার অভিযোগ করলে ওইদিনই আল-আমিন নামে প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে আটক করে পুলিশ।
রোমানিয়ায় বন্দি থাকা তানভীরের ভাই মো. সৈয়দ শেলিম জানান, রোমানিয়া থেকে ইতালিতে পাঠানোর জন্য গ্রিসে অবস্থানরত শাহিনের সঙ্গে চুক্তি করে ভাগনে আল-আমিন ও তার স্ত্রী সুমি। সবাইকে উপস্থিত রেখে আমরা পাঁচ পরিবার তাদের ৮ লাখ টাকা করে দিই। কিন্তু তারা আমার ভাইসহ অন্যদের ইতালি না নিয়ে রোমানিয়ার কোনো এক জায়গায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করছে। আমার ভাইসহ সবাইকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি চাই এবং এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে আল-আমিনের পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করার পর থেকে তারা কেউ বাড়িতে নেই বলে জানান আশপাশের লোকজন। তবে অভিযুক্ত শাহিনের স্ত্রী সুমি বেগম জানান, আমার স্বামীর সঙ্গে অনেক বছর কোনো যোগাযোগ নেই। তাছাড়া আমি আমার বাবার বাড়িতে থাকি। তারা শাহিনকে টাকা দিয়েছে কি না এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। বিষয়টি জানার পর আমি শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে আল-আমিন নামে একজনকে আটক করেছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।