রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এবং আহতের ঘটনায় ৪ মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছয় শিক্ষককে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
মামলার আসামিরা হলেন— গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মশিয়ার রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের প্রভাষক খাদিজা শারমিন (অন্তরা), অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হোসেন এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহা. মাহমুদুল হক।
গত ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ হত্যা ঘটনায় ১৮ আগস্ট শিক্ষক মো. মশিয়ার রহমান ও মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী।
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গত রোববার (২৫ আগস্ট) মোহা. মাহমুদুল হাসান, খাদিজা শারমিন (অন্তরা), ড. মো. মোর্শেদ হোসেনের নামে মামলা করেন নগরীর লালবাগ চুরিপট্টি এলাকার বাসিন্দা দোকান শ্রমিক মমদেল হোসেন ওরফে মমদেল (২৮)।
মামলার আবেদনে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সিটি বাজার এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে বাদী মমদেল হোসেনের বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ গুঁড়ো হয়ে যায়। এ ছাড়া হাতে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। পরে তাকে রংপুর থেকে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ ও হাতের আঙুল কেটে ফেলা হয়। ওইদিন ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান অন্তত পাঁচজন।
গত ২৫ আগস্ট হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত, ভয়ভীতি প্রদর্শন হুমকি দানের অপরাধে তাবিউর রহমান প্রধানের নামে মামলা করেন মো. কাশেম (৪৩)।
মামলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকেই কেউ ষড়যন্ত্র করে মামলা দিয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আসামি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হক বলেন, আমি সাত বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৯ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাই। ২০১২ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করে একজন শিক্ষক নিয়োগ পান, যার বিরুদ্ধে আমি আবার হাইকোর্টে মামলা করি, রুল দেয় কোর্ট এই মর্মে যে কেন জালিয়াতির জন্য তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত এক কমিটি অবৈধ নিয়োগের প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়। ওই শিক্ষক তার চাকরি বাঁচাতে বাদী বা আইনজীবীকে প্রভাবিত করে আমাকে আসামি করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, বাদী বলেছেন তিনি আমাকে চিনেন না এবং আমাকে আসামি করেননি।
প্রভাষক খাদিজা শারমিন (অন্তরা) বলেন, ব্যক্তিগত কারণে বা কোনো শত্রুতার কারণে এমন মামলা দিয়েছে। আমি গত ১৯ জুলাই দাঁতের ডাক্তার দিয়ে কাছে দাঁত তুলেছি। আমি কিভাবে এ ঘটনায় জড়িত হব? আমার শিক্ষার্থীরা জানে আমি কেমন। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের বিপক্ষে নির্বাচন করেছি। আমি কখনো রাজনৈতিক দল করি নাই।
উল্লেখ্য, বাকি ৩ জন শিক্ষকের সঙ্গে একাধিক বার ফোন কলের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।