রেলের একটি প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না করায় গচ্চা যাচ্ছে ৪৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের গড়িমসির কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০টি ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল। নতুন করে আবারও ওই প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে ২০০ কোচ কিনতে ৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বাড়তি গুণতে হবে সরকারকে।
পুনর্গঠিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) দেখা যায়, প্রতিটি ক্যারেজের দর ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৫৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, যা আগের ডিপিপিতে ছিল ৬ কোটি ৩৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা। পূর্বের ডিপিপির তুলনায় পুনর্গঠিত ডিপিপিতে প্রতি ক্যারেজে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। এই বাড়তি ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কারণ ক্যারেজগুলো ঋণের টাকায় কেনা হবে। এই প্রকল্পে ঋণের জন্য ইউরোপীয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) সঙ্গে চুক্তি হয় ২০২১৮ সালে। তাই ব্যাংকটির শর্ত পর্যালোচনা করার কথাও বলা হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো ও যাত্রী সুবিধা বাড়াতে কোচগুলো কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় দুই বছর আগে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা হয়েছিল। সেখানে আমাদের কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল। কিন্তু তারা (বাংলাদেশ রেলওয়ে) অনেক দেরিতে আবারও ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। রেট সিডিউলের কারণে আগের ডিপিপির চেয়ে বর্তমান ডিপিপিতে কিছু খাতে দাম বেশি চাওয়া হয়েছে। তবে তারা বাড়তি ব্যয় চাইলেই হবে না। আমরাও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখবো। প্রকল্পটি নিয়ে আবারও সভা করবো। আমাদেরও কিছু নিজস্ব পর্যক্ষেণ আছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে প্রকল্প পাঠানো হলেই পাস করা হবে, বিষয়টা এমন নয়। সব কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হবে। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩৮০ কোটি টাকা এবং ইউরোপীয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ঋণ হিসেবে ১ হাজার ৩৫৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা দেবে। চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৪৬৭টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ রয়েছে। যার মধ্যে ১৭৬টির আয়ু এরই মধ্যে শেষ। রেলওয়ের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী আগামী ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সব ট্র্যাক ব্রডগেজে রূপান্তর করা হবে।
প্রকল্পের পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। পিইসি সভার প্রায় ১৬ মাস পর পুনর্গঠিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। পুনর্গঠিত প্রকল্প ব্যয় ১ হাজার ৭৩৫ কোটি ৯৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এত বিলম্বে পাঠানো হলেও ডিপিপিতে পিইসি সভার কতিপয় সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হয়নি বলে দাবি পরিকল্পনা কমিশনের। এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি পুনরায় পিইসি সভায় পেশ করা হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ বিষয়ে জানার জন্য ফোন করা হলে প্রকল্পের পরিচালক মৃণাল কান্তি বণিকে পাওয়া যায়নি।