অভিবাসী কর্মীদের পরিবার রেমিট্যান্সের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। রেমিট্যান্সের অর্থ দিয়ে দৈনন্দিন ব্যয় এবং বিনিয়োগ উভয়কাজেই সিদ্ধান্ত নিতে তারা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। তাদের কাছে পরিকল্পিত আর্থিক কোনও পরিকল্পনা থাকে না। আর্থিক সাক্ষরতার দিক থেকে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীরা অনেক পিছিয়ে। আর্থিক শিক্ষা না থাকায় সঞ্চয়, বিনিয়োগ সম্পর্কে ধারণা তাদের অত্যন্ত কম।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাতে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সহায়তায় হেলভেটাস বাংলাদেশ আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।
কর্মশালায় সম্ভাব্য বিদেশগামীদের জন্য প্রাক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল এবং বিদেশে কর্মরত অভিবাসী পরিবারের আর্থিক সাক্ষরতা নিশ্চিতে আরেকটি ম্যানুয়ালের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
হেলভেটাস বাংলাদেশ জানায়, অভিবাসী কর্মীদের পরিবারে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আনায় অভিবাসী কর্মীদের পরিবারের সঞ্চয় বাড়ছে। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর মধ্যে আছে- মোবাইলে অতিরিক্ত কথা কমিয়ে আনা, বাড়িতে মোবাইল ডেটার পরিবর্তে ওয়াইফাই সংযোগ বসানো, সামাজিক মাধ্যমে কম সময় ব্যয় করা, ফাস্টফুড কম খাওয়া, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক না কেনা, কম প্রসাধনী ব্যবহার এবং অপ্রয়জনে বাইরে ঘোরাঘুরি কমিয়ে দেওয়া।
এছাড়া সমীক্ষায় আরও জানা যায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী বিনিয়োগ করলে রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব। সেক্ষেত্রে, খামার এবং কৃষি কাজে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
হেলভেটাস বাংলাদেশ জানায়, আর্থিক সাক্ষরতা নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ায়। পরিকল্পিত প্রশিক্ষণের ফলে নারীরা পরিবারের খরচ এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে পারেন।
সিমস প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ পেয়ে লাভবান হয়েছেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ফারজানা আক্তার। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের পর আমি অতিরিক্ত প্রসাধনী কেনা কমিয়ে দিয়েছি। এছাড়া প্রয়োজনের বেশি পোশাক কেনা এবং বাইরে অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি কমিয়ে দেওয়ায় আমার সঞ্চয় বেড়েছে।
আরেক অভিবাসী পরিবারের সদস্য ঝর্ণা বলেন, প্রশিক্ষণের পর আমি দর্জির কাজ বাদ দিয়ে এখন খামারের কাজে মনোনিবেশ করেছি যা থেকে আমি বেশ আয় করে পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজিয়া হায়দার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি তিনটি খাতের ওপর নির্ভরশীল। কৃষি, রেমিট্যান্স এবং তৈরি পোশাক খাত। সুতরাং রেমিট্যান্স আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে কৌশলগতভাবে সুইজারল্যান্ডের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বিশ্বের অল্প কিছু দেশ যাদের সঙ্গে সুইজারল্যান্ড কাজ করে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে একটি। বৈশ্বিকভাবে ১ দশমিক ২ শতাংশের একটি অঙ্গীকার আছে যে প্রতিটি উচ্চ আয়ের দেশ তাদের জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ অন্যের উন্নয়নে কাজে নিবেদন করবে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠায়। সেই লক্ষেই সুইজারল্যান্ড সরকার বাংলাদেশের পাশে আছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, সিমস প্রকল্পের সঙ্গে ব্যাংকের সংযুক্তি থাকার প্রয়োজন আছে। ব্যাংকের তারল্য যদি কমে যায় আর ব্যাংক যদি আর্থিক সাক্ষরতা শেখাতে পারে তাহলে টাকাটা তো তার কাছেই থাকবে। টাকাটা জমাতে পারলে তো ব্যাংকেই থাকবে। তাহলে সঞ্চয় করলে শুধু অভিবাসী পরিবার লাভবান হবে না, ব্যাংকও হবে। অভিবাসী পরিবার যদি ব্যাপকভাবে সঞ্চয় করে তাহলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে।
অনুষ্ঠান শেষে হেলভেটাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বেঞ্জামিন ব্লুমেন্থাল ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়নে এই খাতে আরও বেশি কাজ করার ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এনজিও, ব্যাংক, গবেষক, সিমস প্রকল্পের সহযোগী সংস্থাসমুহ ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।