করোনা ভাইরাসের কারণে শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ২০১৯ সালে দেশটির মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) এই খাতের অবদান ছিল ১২ দশমিক ৬ শতাংশ, যা এখন অনেক কমেছে। ফলে বৈদেশিক বিনিময়ে প্রতিনিয়ত মান হারাচ্ছে দেশটির মুদ্রা রুপি। এতে টান পড়েছে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে। এমন পরিস্থিতিতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ডলার ধার করছে শ্রীলঙ্কা। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারও ২০ কোটি ডলার দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এ ডলার দেওয়া হবে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এই প্রথমবারের মতো কোনো দেশের সরকারকে সোয়াবের আওতায় বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারি বন্ডে রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। কিন্তু কোনো দেশের সরকারকে বিনিয়োগ সুবিধা দেয়নি। যা এবার শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কাও এর আগে বাংলাদেশ থেকে সোয়াবের আওতায় কোনো বিনিয়োগ সুবিধা নেয়নি। তবে তারা ২০১৫ সালে ভারত থেকে সোয়াবের আওতায় সে দেশের রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগ সুবিধা নিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ধার হিসেবে নয়, ডলারের সঙ্গে শ্রীলঙ্কান রুপি অদল-বদল বা সোয়াপ করেই তা দেওয়া হবে। এর বিপরীতে কিছু সুদও পাবে বাংলাদেশ। গত রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ রিজার্ভ থেকে এ ডলার দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে মার্চে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও ঢাকায় এসেছিলেন। ঐ সময়ে তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্রস্তাব দেন। এতে তিনি সম্মত হলে পরে শ্রীলঙ্কায় ফিরে গিয়ে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠান। এর আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ ঐ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কা সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে ভুগছে। বর্তমানে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে মাত্র ৫০০ কোটি ডলার। এ রিজার্ভ দিয়ে তাদের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। রিজার্ভকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রাখতে হয়। এ কারণে তারা ঋণ করে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর হলেও, শ্রীলঙ্কা আমদানি নির্ভর নয়। তাদের আমদানির পরিমাণ কম। এছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিও ভালো। যে কারণে তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। আর এটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। এতে শ্রীলঙ্কার সরকারের শতভাগ গ্যারান্টি রয়েছে।
জানা গেছে, সোয়াবের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে ভুগলে এর আওতায় ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারে। এটি প্রথমে দেওয়া হয় তিন মাসের জন্য। পরে এর মেয়াদ দুই পক্ষের সম্মতিতে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সাধারণত লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়। তবে এটি দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।
এর আগে বাংলাদেশ ২০০১ সালে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পড়লে দেশের রিজার্ভ ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে যায়। তখন বাংলাদেশ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। তখন আকুর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রথম সোয়াব করে। সে অনুযায়ী আকুর দেনা বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা আকু থেকে তিন মাসের জন্য ঋণ নেয়। সুদসহ পরে তা পরিশোধ করে দেওয়া হয়। এরপরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর কোনো সোয়াব সুবিধা নেয়নি।