সুইফট কোডে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (৮১০ কোটি টাকা) রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে দেড় কোটি ডলার। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার এখনও ফেরত মেলেনি। এ নিয়ে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের আদালতে মামলাও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাতে ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংকসহ ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
সম্প্রতি এ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে রিজার্ভ চুরির মামলা বাতিলের দুটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন নিউইয়র্কের আদালত। এতে অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশের করা মামলা পরিচালনায় আর কোনো বাধা থাকছে না। যার ফলে চুরি হওয়া এই অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক এই তথ্য জানিয়েছেন। পাশাপাশি এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আর্থিক গেয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক জানিয়েছেন, এই মামলা বাতিলে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) যে আবেদন করেছিল, তা খারিজ করে সমঝোতার আদেশ হয়েছে। এ জন্য বিবাদীদের ২০ কার্যদিবসের সময়ও দিয়েছেন নিউইয়র্কের আদালত।
মেজবাউল হক বলেন, ‘নিউইয়র্ক স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের ২০ দিন বা আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দাখিল করতে আদেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে মধ্যস্ততার নির্দেশনাও প্রদান করেছে।’
নিউইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান মধ্যস্ততার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির রাতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ এই রিজার্ভ সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে। পরে সেই অর্থ স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে তিনটি ক্যাসিনোতে চলে যায়। পরবর্তীকালে বিষয়টি প্রকাশে আসার পর এ নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপিন্স সরকার। পরে তা বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
ফলে রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া মোট ৮ কোটি ১০ লাখের মধ্যে বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারে ২০১৯ সালে আলোচিত এই মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাতে রিজল ব্যাংক ছাড়াও সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো ও ম্যানিলা বে পরিচালনাকারী ব্লুমবেরি রিসোর্ট কর্পসহ ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
ফলে রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া মোট ৮ কোটি ১০ লাখের মধ্যে বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধারে ২০২০ সালে আলোচিত এই মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দি সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কে (ফেডারেল কোর্ট) করা ওই মামলায় রিজল ব্যাংক ছাড়াও সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো ও ম্যানিলা বে পরিচালনাকারী ব্লুমবেরি রিসোর্ট কর্পসহ ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। পরে আরসিবিসিসহ ৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মামলা বাতিল করার (মোশান চু ডিসমিস) আবেদন করে। এরপর বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ২০ মার্চ ফেডারেল আদালত ফিলিপিন্সের বিভিন্ন বিবাদী কর্তৃক দায়ের করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে মামলাটি ফেডারেল কোর্টের পরিবর্তে স্টেট কোর্টে পরিচালনার নির্দেশ দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট (স্টেট কোর্ট) আরসিবিসিসহ ফিলিপাইনের ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তবে মামলা দায়েরের পর ৬ বিবাদী ফেডারেল কোর্টের মতো এই কোর্টেও মামলা বাতিলের আবেদন করে। এ নিয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর বিবাদীপক্ষের আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
পরবর্তীকালে নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল মামলার আংশিক রায়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেন। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল আবেদন করে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের আবেদন করেছেন।
রায়ে আদালত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ক্ষেত্রে আরসিবিসি’র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যোগসাজশ ছিল। আরসিবিসি’র নিউইয়র্কের হিসাব ব্যবহার না হলে এবং ফিলিপাইনে আরসিবিসি অভিযুক্তদের সহযোগিতা না করলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ওই অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না।