ন্যাটো সামরিক জোটের মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। জার্মান পত্রিকার বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা। ন্যাটো মহাসচিব বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ইউক্রেনে রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র ব্যবহারের কথা জোরালোভাবেই শুনতে পাচ্ছি। তবে ক্রেমলিনের মিথ্যাচারে সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেন, ‘তারা (রাশিয়া) নানা রকম মিথ্যা দাবি করছে। আমাদের সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখতে হবে, রাশিয়া এই মিথ্যাচারের মধ্যেই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা করতে পারে। এমন করলে তা হবে যুদ্ধাপরাধ’। ইউক্রেনের জনগণ সাহসের সঙ্গে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করছে। সামনের দিন আরও কঠিন হতে পারে বলেও জানান ন্যাটো প্রধান।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন জীবাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। এ বিষয়ে রাশিয়ার অনুরোধে ১২ মার্চ নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরি সভা হয়েছে। তবে রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে ইউক্রেন বলছে, এটি হলো রাশিয়ার নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা, যার মূল উদ্দেশ্য ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনাকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা।
রাসায়নিক অস্ত্র আসলে কী?
রাসায়নিক অস্ত্র হলো এমন ধরনের যুদ্ধাস্ত্র, যা টক্সিন বা রাসায়নিক পদার্থ যা মানুষের শরীরের সিস্টেমগুলোতে আক্রমণ করে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির রাসায়নিক অস্ত্র আছে। একটা আছে চোকিং এজেন্ট, যা ফুসফুস ও রেসপিরেটরি সিস্টেমে আক্রমণ করে ফুসফুসকে অচল করে দেয়। আবার ব্লিস্টার এজেন্ট হিসেবে আছে মাস্টার্ড গ্যাস। এটা শরীরের চামড়া পুড়িয়ে দেয় ও মানুষকে অন্ধ করে দেয়।
কিছু আছে মারণাস্ত্র ধরনের। যেমন নার্ভ এজেন্ট যা মস্তিষ্কে ও শরীরের পেশীতে ঢুকে পড়ে। এর ক্ষুদ্র কণা পরিমাণও প্রাণঘাতী হতে পারে। আধা মিলিগ্রাম ভিএক্স নার্ভ এজেন্ট একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। এসব কথিত রাসায়নিক উপাদান যুদ্ধ ক্ষেত্রে কামানের গোলা, বোমা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্রেও ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু এসবই ১৯৯৭ সালে কেমিক্যাল উইপন কনভেনশনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক অর্গানাইজেশন ফর দা প্রহিবিশন অফ কেমিক্যাল উইপনস বা ওপিসিডব্লিউ এ বিষয়ে বৈশ্বিক মনিটরিং প্রতিষ্ঠান। তারা মূলত এসব অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহার ও বিস্তার প্রতিরোধে বিষয়ে কাজ করে। এসব অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে, ইরাক-ইরান যুদ্ধে এবং সম্প্রতি সিরিয়ায়। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ২০১৭ সালে তাদের রাসায়নিক অস্ত্রের সর্বশেষ সম্ভার ধ্বংস করেছে। যদিও এরপর অন্তত দুটি রাসায়নিক হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা হয়।
ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। রোববার (১৩ মার্চ) ১৮ দিনের মতো রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা। এই যুদ্ধে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেন। রুশ আক্রমণের প্রথম ১৭ দিনে প্রায় ১ হাজার ৩০০ ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যদিও বিবিসি সেই তথ্য যাচাই করতে পারেনি। পশ্চিমা সূত্রগুলো শুক্রবার জানায়, এই যুদ্ধে অন্তত ৬ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন।