দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি ভোট উপলক্ষে এখনও কোনও প্রার্থী মনোনয়ন ফরম নেয়নি। আগামী রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন। তবে আগামী শনিবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন ফরম নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
ইসির যুগ্মসচিব এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আজ পর্যন্ত কোনও দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন নেওয়া হয়নি। যেহেতু আগামী রোববার পর্যন্ত মনোনয়ন জমার শেষদিন সেহেতু এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আগামীকাল শুক্র ও শনিবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়ন বিক্রির জন্য অফিস খোলা থাকবে।
এর আগে, গত ২৫ জানুয়ারি আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সিইসির কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে যতক্ষণ সময় লাগে। প্রত্যাহার ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সংসদ ভবনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, যিনি এ নির্বাচনের ‘নির্বাচনী কর্মকর্তা’। নির্বাচনী কর্মকর্তার কার্যালয়ের (প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অফিসে নির্ধারিত দিনে অফিস চলাকালে) মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। প্রার্থীর সংখ্যা একজনের বেশি না হলে তাকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে বিধিমালা অনুযায়ী ভোট হবে।
আগামী ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। পরের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। একাধিক প্রার্থী থাকলে ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ভোট গ্রহণ করা হবে। সংসদ সদস্যরা ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন।
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আর রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর সমর্থক ও প্রস্তাবক হতে হয় সংসদ সদস্যদের। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেবে না বলে এরইমধ্যে জানিয়েছে। সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন। তাই আজ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার পাশাপাশি প্রস্তাবক ও সমর্থক কারা হবেন সেটাও ঠিক করা হবে বলে জানা গেছে।
যেভাবে হবে নির্বাচন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ সদস্যরাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। এর মুড়ি অংশে স্বাক্ষর দিয়ে ভোটারদের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। ভোট দেওয়ার পর সংসদকক্ষে স্থাপিত এক বা একাধিক ব্যাটল বাক্সে তা জমা দিতে হবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্যের একটি মাত্র ভোট থাকবে। সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকারও এ নির্বাচনে ভোট দেবেন। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদকক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনী কর্মকর্তা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক সংখ্যক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।
১৯৯১ সালে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সাতবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সংসদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। আর ওই সময় বিরোধীদল ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে। ওই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস বিজয়ী হন। এছাড়া প্রতিবার একক প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর নির্বাচন কমিশন গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে একক প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে।