তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে পারে রাশিয়া। এমন শঙ্কাই মনে রয়েছে জার্মানির। একইসঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাতের প্রস্তুতিও নিচ্ছে দেশটি। ফাঁস হওয়া নথির বরাতে এসব তথ্য সামনে এসেছে।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মানি রাশিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিখ্যাত জার্মান পত্রিকা বিল্ড। সংবাদপত্রটি এই তথ্য জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোপন নথি থেকে পেয়েছে বলে জানিয়েছে।
আউটলেটটি দাবি করেছে, রাশিয়া আগামী বছর সামরিক জোট ন্যাটোর মিত্র দেশগুলোতে আক্রমণ করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ আরও প্রসারিত করতে পারে। আর এটিকেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাব্য শুরু বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
জার্মান এই পত্রিকার রিপোর্টটি এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান সংঘাত দুই বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে চলেছে। যাইহোক, রাশিয়ান কর্মকর্তারা বিল্ডের এই প্রতিবেদনটি ‘ভুয়া’ বলে অভিযুক্ত করে কোনও ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, ইউরোপের (বিভিন্ন দেশের) সশস্ত্র বাহিনী ন্যাটোর পূর্ব দিকে রাশিয়ার আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এর মধ্যে সাইবার আক্রমণও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
সূত্রের বরাত দিয়ে বিল্ড আরও বলেছে, এই পরিস্থিতিতে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে এবং কয়েক হাজার জার্মান সৈন্যকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হবে। জার্মান এই আউটলেট অনুসারে, যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলো থেকে তহবিল হ্রাস পাচ্ছে, তাই রাশিয়ান বাহিনী ‘বসন্তে’ ইউক্রেনের সেনাদের ওপর হামলা করবে।
এরপর ধাপে ধাপে, মাসে মাসে, কীভাবে রাশিয়ান বাহিনী এগিয়ে যাবে এবং কীভাবে ন্যাটো তার মিত্রদের রক্ষা করবে সেটিও এতে বর্ণনা করা হয়েছে।
গোপন এই নথি অনুসারে, সেপ্টেম্বরে সংঘর্ষ বাড়বে এবং এটিই রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চালে ও বেলারুশে প্রায় ৫০ হাজার রাশিয়ান সৈন্যকে নিয়ে বড় আকারের সামরিক মহড়া শুরু করতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে প্ররোচিত করবে।
নথি অনুসারে, রাশিয়া তখন কালিনিনগ্রাদে সৈন্য এবং মধ্য-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রেরণ করতে পারে। এটি মূলত পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার মতো ন্যাটোভুক্ত দেশের মধ্যে অবস্থিত একটি রাশিয়ান অঞ্চল।
বিল্ড আরও বলেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নিজেদের প্রোপাগান্ডা এবং আরও সহিংসতাকে ইন্ধন দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া।
নথিতে বলা হয়েছে, বিপুল সংখ্যক রুশ সৈন্য মোতায়েন এবং রাশিয়ান ও পশ্চিমা সৈন্যদের মধ্যে যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে ২০২৫ সালের মে মাস নাগাদ ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করবে ন্যাটো।
রাশিয়ার বার্তাসংস্থা তাস ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভকে এই প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি। তবে পেসকভ বলেছেন, ‘সম্প্রতি, এই সংবাদপত্রটি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ভুয়া খবর এবং হাস্যোদ্দীপক গুজব (ক্যানার্ড) প্রকাশের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা প্রতিবেদনটিকে ‘গত বছরের রাশিফল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।