যুদ্ধক্ষেত্রের নানা খবর, কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ, হতাহতদের স্বজনদের বিলাপ আর বাস্তচ্যুতদের দুর্ভোগ-এগুলোর মধ্যে মানসিকভাবে দিশেহারা হয়ে পড়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তার মধ্যেও বিশ্লেষকরা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছেন যে আগামীদিনগুলোতে ইউক্রেনের এই সংঘাত ঠিক কোন দিকে যেতে পারে। সম্ভাব্য কয়েকটি চিত্র এখানে তুলে ধরা হচ্ছে, যার কোনোটিই খুব আশাব্যঞ্জক নয়।
সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ
দীর্ঘ যুদ্ধ
রুশ বাহিনী তাদের নেতৃত্বের অদক্ষতা, যুদ্ধের সরঞ্জাম আনা-নেওয়ার সমস্যা, নিম্ন মনোবল—এ রকম নানা কারণে কিছুটা দমে যেতে পারে। এমনো হতে পারে যে ইউক্রেনীয়দের কড়া প্রতিরোধের কারণে রুশদের পক্ষে কিয়েভের মতো শহরগুলো দখল করতে বেশি সময় লেগে যেতে পারে। এর ফলে যেটা হতে পারে তা হলো, দীর্ঘ সময় ধরে শহরগুলো ঘেরাও হয়ে থাকা। হয়তো অনেকের মনে পড়বে ১৯৯০-এর দশকে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রজনি শহর দখলের জন্য রাশিয়ার দীর্ঘ ও রক্তাক্ত যুদ্ধে শহরটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। ইউক্রেনেও হয়তো তেমন কিছু হতে পারে।
ইউরোপজুড়ে যুদ্ধ
এমনও হতে পারে এ যুদ্ধ ইউক্রেনের সীমান্ত পার হয়ে বাইরেও ছড়িয়ে পড়ল। প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো রাশিয়ার সাবেক সোভিয়েত সাম্রাজ্যের আরো কিছু অংশ পুনর্দখল করার চেষ্টা করতে পারেন। তিনি হয়তো মলদোভা এবং জর্জিয়ায় রুশ সৈন্য পাঠাতে পারেন। অথবা নিতান্তই ভুল হিসাব-নিকাশের কারণেও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কূটনৈতিক সমাধান
বিস্ময়কর হলেও এটা সত্য যে, রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা বেলারুস সীমান্তে বৈঠকও করেছেন। এতে হয়তো এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি, কিন্তু বৈঠকের প্রস্তাবে পুতিন রাজি হওয়ায় এটা বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি আলোচনার মাধ্যমে একটা যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে মেনে নিয়েছেন। একটা প্রশ্ন হলো, এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পশ্চিমা জোট কোনো উপায় প্রস্তাব করতে পারে কি না? কূটনীতিকরা বলছেন, রুশ নেতার এটা বোঝা দরকার যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলতে হলে তাকে বিনিময়ে কী করতে হবে।
পুতিনও ক্ষমতাচ্যুত হতে পারেন
একটা গুরুতর প্রশ্ন, ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষেত্রে কী হবে? ইউক্রেন অভিযান শুরু করার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যে কোনো পরিণতির জন্য তৈরি।’ কিন্তু সেই পরিণতি যদি এমন হয়, পুতিনকেই ক্ষমতা হারাতে হলো। লন্ডনের কিংস কলেজের ওয়ার স্টাডিজের অধ্যাপক স্যার লরেন্স ফ্রিডম্যান এ সপ্তাহেই এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘এটা এখন খুবই সম্ভব যে কিয়েভ এবং মস্কো, যে কোনোখানেই ক্ষমতার পটপরিবর্তন হতে পারে।’ কেন তিনি এ কথা বলছেন? এর কারণ সম্ভবত এটাই যে, পুতিন এক বিপর্যয়কর যুদ্ধে নেমেছেন। এতে হাজার হাজার রুশ সৈন্য মারা যেতে পারে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ডেকে আনতে পারে দুর্ভোগ। পুতিন জনসমর্থন হারাতে পারেন। হয়তো একটা গণবিপ্লবের হুমকিও সৃষ্টি হতে পারে এবং রাশিয়ার সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এলিট শ্রেণি পুতিনের বিপক্ষে চলে যেতে পারে। রাশিয়া একটা রক্তাক্ত প্রাসাদ অভ্যুত্থান ঘটে যেতে পারে এবং পুতিন উৎখাত হতে পারেন।
যে সম্ভাবনাগুলো কথা বলা হলো, এগুলো যে হুবহু এরকম করেই ঘটবে তা নয়। হয়তো এগুলোর কোনো একটি-দুটি মিলে ভিন্ন কোনো পরিণতিও ডেকে আনতে পারে। কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধে সামনের দিনগুলোতে যা-ই ঘটুক, পৃথিবী বদলে গেছে। তা আর পূর্বাস্থায় ফেরত যাবে না। তাই রাশিয়ার সঙ্গে বাকি বিশ্বের সম্পর্ক আগামীদিনে বদলে যাবে।