ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করায় রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমারা। এই নিষেধাজ্ঞা মূলত সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার একটি কৌশল। আর সে কারণেই পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞাকে ‘যুদ্ধের শামিল’ বলে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কিন্তু রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে সংকটে পড়েছেন পশ্চিমাদের নেতৃত্ব দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তেল আর গ্যাস নিয়ে শুরু হয়েছে তাদের মাথাব্যথা। এরই মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ববাজারে। ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উঠেছে জ্বালানি তেলের দাম। সোমবার অপরিশোধিত তেলের দাম এশিয়ার বাজারে ব্যারেল প্রতি ১৩৯ ডলার ছুঁয়েছে। পরে প্রতি ব্যারেলে তেলের বাড়তি এ দাম গিয়ে স্থির হয়েছে ১৩০ ডলারে।
জ্বালানি তেলের এই সংকট যে শুরু হবে তা আগেই আঁচ করতে পেরেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর আগেই গত মাসে রিয়াদে যান মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ দূত আমোস হোচস্টেইন। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে তেলের বাজারে সম্ভাব্য প্রভাব ঠেকাতেই সৌদি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তবে সৌদি আরবের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি।
এখন তেলের বাজারের অস্থিরতায় বিপাকে পড়ে ভেনেজুয়েলায় ছুটছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। গত শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। ইউক্রেন হামলার ঘটনায় রাশিয়াকে একঘরে করতে ভেনেজুয়েলাকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি জানিয়েছিলেন, জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাশিয়ার ওপর থেকে জ্বালানি নির্ভরতা কত দ্রুত কমানো যায়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তবে এসব আশ্বাসের পরও জ্বালানি তেলের দাম কোনোভাবেই কমছে না। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইউরোপের ৪৫ শতাংশ গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভর করতে হয়। যুদ্ধ শুরুর পরও সেই গ্যাস পাঠাচ্ছে রাশিয়া। কিন্তু এর শেষ যে কোথায় হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। যদিও রাশিয়ার নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপ লাইনে গ্যাস নেওয়া স্থগিত করে রেখেছে জার্মানি। প্রসঙ্গত, রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর ১২ দিন ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনারা। এই যুদ্ধে ইউক্রেন সেনাদের সঙ্গে বেসামরিক লোকজনও অংশ নেওয়ায় এটা এখন জনযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।