ইউরোপ যদি মনে করে—রাশিয়ার জ্বালানি গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ইউক্রেনের যুদ্ধে সমাপ্তি টানবে, তাহলে বড় ধরনের বিভ্রাট ঘটবে বলে মনে করেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ। শুলজের মতে, এ রকম কোনো পদক্ষেপ ইউরোপকে বিপদে ফেলবে; কিন্তু রাশিয়াকে দমাতে পারবে না।
এছাড়া ইউক্রেনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠোনো নিয়ে ইউরোপের দেশসমূহকে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যদি কোনোভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সংঘাত বাঁধে, সেক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। এ বিষয়েও পশ্চিমা বিশ্বকে সতর্ক থাকা ও রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত এড়িয়ে চলা উচিত বলে মনে করেন জার্মানির চ্যান্সেলর।
বৃহস্পতিবার জার্মানির দৈনিক পত্রিকা ডের স্পিগেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওলাফ শুলজ বলেন, ‘আমি একেবারেই মনে করি না যে, রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নিষেধজ্ঞা জারি করে এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানা সম্ভব। পুতিন সব জেনেশুনেই এই পাগলাটে যুদ্ধ শুরু করেছেন এবং গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাকে দমানো যাবে না; বরং এটি ইউরোপের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।’
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ইউরোপ। মহাদেশের মোট জ্বালানি তেলের চাহিদার ১০ শতাংশ, কয়লার ৩০ শতাংশ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ যোগান আসে রাশিয়া থেকে। ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও কয়লাও রয়েছে।
কিন্তু দেশটির জ্বালানি গ্যাসের ওপরও নিষেধজ্ঞা দেওয়ার প্রস্তাব উঠেছিল ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৈঠকে তবে কয়েকটি দেশের আপত্তির কারণে তা আটকে গেছে। যেসব দেশ এই আপত্তি তুলেছিল, সেসবের মধ্যে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি অন্যতম। ডের স্প্রিগেলকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে শুলজ বলেন, ‘অন্য কোথাও থেকে গ্যাস আমদানি করা হলে খরচ বেশি পড়বে, এটা সত্য; কিন্তু ব্যাপারটি কেবল বাড়তি খরচের নয়।’
‘যদি আমরা এখন এ রকম কোনো পদক্ষেপ নেই সেক্ষেত্রে বহু কারখানা ও কর্মসংস্থান চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। তার ফলে যে বিপর্যয় দেখা দেবে, তা কাটিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে ইউরোপের জন্য।’ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার দু’দিন আগে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে (দনবাস রিপাবলিক) স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেন তিনি।
শুক্রবার ৫৬তম দিনে পৌঁছেছে এই অভিযান। যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা করতে দেশটিতে ইতোমধ্যে কয়েক দফা সহায়তা পাঠিয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এর সমালোচনা করে জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী নই। আমাদের কোনো পদক্ষেপের কারণে যদি ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাত বাঁধে, সেক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
শুলজ বলেন, ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর জন্য দেশের ভেতরে ও বাইরে চাপে আছে জার্মানি; কিন্তু এই চাপকে পাত্তা দেওয়ার পক্ষপাতি নন তিনি। ‘আমরা অবশ্যই এটা হতে দিতে পারি না। কারণ একটি ভুল পদক্ষেপের ফলাফল ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।’