রাশিয়া ও মস্কোপন্থি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলে রাশিয়ায় যোগদানের জন্য গণভোটের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ওই চারটি অঞ্চলে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে।
যদিও পশ্চিমা দেশগুলো এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং গণভোটকে অবৈধ বলেও আখ্যায়িত করেছে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডগুলোর রাশিয়ান-নিযুক্ত নেতারা ভোটের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। মস্কোর এই পদক্ষেপ পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে একটি চ্যালেঞ্জ যা যুদ্ধকে তীব্রভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে। ইউক্রেন এবং দেশটির মিত্ররা স্পষ্টভাবেই ঘোষণা করেছে, গণভোটের ফলাফল যেটিই হোক তারা সেই ফলাফলকে স্বীকৃতি দেবে না।
রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনের প্রায় ১৫ শতাংশ ভূখণ্ডের প্রতিনিধিত্বকারী লুহানস্ক, দোনেতস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া প্রদেশে শুক্রবার থেকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত রাশিয়ায় যোগদানের বিষয়ে ভোট চলবে। এর আগে রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে অধিভুক্ত করেছিল। এতে করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে পড়ে মস্কো।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনোই ক্রিমিয়া অধিগ্রহণকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে এটি দীর্ঘদিন ধরেই স্পষ্ট যে, রাশিয়া একইভাবে (ইউক্রেনের) অন্যান্য দখলকৃত অঞ্চলগুলোকে একই পন্থায় আয়ত্তে নিতে চায়। এছাড়া আরও ইউক্রেনের ভূখণ্ড সংযুক্ত করার ফলে ক্রেমলিন এই দাবি করতে পারবে যে, রাশিয়া নিজেই ন্যাটো অস্ত্রের আক্রমণের শিকার হচ্ছে।
অন্যদিকে যুদ্ধের সাত মাসের মাথায় এসে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইউক্রেন। পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে করা এসব হামলায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেন দ্রুতগতিতে রাশিয়ার কাছ থেকে নিজেদের অনেক এলাকাও পুনর্দখল করতে সক্ষম হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনের দখলকৃত ভূখণ্ডে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে মস্কোপন্থি কর্তৃপক্ষ আলোচনা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু ইউক্রেনের সাম্প্রতিক পাল্টা হামলা ও বিজয় তাদের সেই কাজ আরও দ্রুত করতে কার্যত তাগিদ দিয়েছে।
এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ায় প্রথমবারের মতো সামরিক খসড়ার নতুন একটি আদেশ জারি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত বুধবারের ওই আদেশে ‘মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য’ রাশিয়ায় আংশিক সেনা সমাবেশের ঘোষণা দেন তিনি।
এতে করে ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য আরও ৩ লাখ সেনা তালিকাভুক্ত করতে পারবে রাশিয়া। রাশিয়ার যুক্তি, তাদের সামরিক অভিযান এই অঞ্চলের মানুষের জন্য তাদের মতামত প্রকাশের একটি সুযোগ।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এই সপ্তাহে বলেছেন, ‘সামরিক অভিযানের শুরু থেকেই … আমরা বলেছিলাম, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনগণ তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে এবং বর্তমান পরিস্থিতি পুরোপুরি নিশ্চিত করে যে, তারা তাদের ভাগ্যের মালিক হতে চায়’।
ইউক্রেন বলেছে, রাশিয়া গণভোটের ফলাফলকে তাদের প্রতি মানুষের জনপ্রিয় সমর্থন রয়েছে বলে দেখাতে চায় এবং তারপর ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের মতো (এসব ফলাফলকে) অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করতে চায়, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃতি দেয়নি।
ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গণভোটের ফলাফল অনিবার্যভাবে রাশিয়ার পক্ষেই থাকবে বলে মনে করা হয়। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াতে যে ভোট হয়েছিল তাতে রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্তির পক্ষে ৯৭ শতাংশ ভোট পড়ে। যদিও সেই ভোটে কারচুপি করা হয়েছিল বলে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোনার শিকার হয়েছে রাশিয়া।
লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সের্হি গাইদাই ইউক্রেনীয় টিভিকে বলেছেন, ‘যদি এটি পুরোপুরি রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসাবে ঘোষণা করা হয়, তবে (কোনো হামলা হলে) তারা ঘোষণা করতে পারে যে এটি রাশিয়ার ওপর সরাসরি আক্রমণ যাতে তারা কোনো দ্বিধা ছাড়াই লড়াই করতে পারে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পাশাপাশি সামরিক জোট ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থা (ওএসসিই)-সহ বিশ্ব নেতারা এই গণভোটের নিন্দা করেছেন।
বৃহস্পতিবার ন্যাটো বলেছে, ‘ভুয়া গণভোট’ ‘অবৈধ এবং আইনত ভিত্তিহীন’।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ওএসসিই বলেছে, এই ভোটের ফলাফলের কোন আইনি ভিত্তি থাকবে না কারণ এটি ইউক্রেনের আইন বা আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং এলাকাগুলোও নিরাপদ নয়।
এছাড়া সেখানে কোনো স্বাধীন পর্যবেক্ষক থাকবে না এবং যুদ্ধ-পূর্ব জনসংখ্যার বেশিরভাগই পালিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, দোনেতস্ক এবং লুহানস্কের দুই রাশিয়ান-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, রাশিয়ায় যোগদানের বিষয়ে তারা আগামী ২৩-২৭ সেপ্টেম্বর ভোট আয়োজন করবে।
এছাড়া খেরসনের দক্ষিণ অঞ্চলে রাশিয়ান-নিযিুক্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, তারাও একটি ভোট আয়োজন করবেন এবং একই রকম ঘোষণা জাপোরিঝিয়ায় রাশিয়ান-অধিকৃত এলাকা থেকেও এসেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আগেই জানিয়েছে, এসব অঞ্চলের লোকেরা ব্যক্তিগতভাবে বা দূরে থেকেও ভোট দিতে পারবেন।