সাত বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটিকে বিতর্কিত অ্যাখ্যা দিয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগের একাধিক পদবঞ্চিত নেতাকর্মী। এসময় সদ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়।
রোববার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দলীয় ট্রেন্টে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এ সময় সদ্য কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে থাকেন তারা। কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা না করা পর্যন্ত বর্তমান কমিটিকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে পারবে না বলে জানান পদবঞ্চিতরা।
পরে দলীয় ট্রেন্ট থেকে ক্যাম্পাসে শোডাউন বের করেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। শোডাউন শেষে সদ্য কমিটি সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের হল মাদারবক্স হলে গিয়ে তার কক্ষে ভাঙচুর করেন তারা। পরে পরিবহন মার্কেটে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে দেখে মারধর করেন এবং তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।
এসময় পদবঞ্চিত একাধিক নেতাকর্মী জানান, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র না মেনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছেন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, বিবাহিত ও অছাত্ররা কমিটিতে আসতে পারবে না। কিন্তু যাদেরকে নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তারা দুজনেই বিতর্কিত। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন না সদ্য কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। পড়াশোনা শেষ করে সেলুনের ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবসা এবং নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিলো বাবু। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউট হয়েছেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। তার বিবাহিত ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব বিতর্কিত নিয়ে কমিটি ঘোষণা করায় আমরা বর্তমান কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।
সদ্য কমিটির সহ-সভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন বলেন, বর্তমান কমিটি সম্পূর্ণ বিতর্কিত। অছাত্র, ইন্টারপাস ও বিতর্কিতদের নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। সভাপতি বাবু ৬ মাস আগে রাজনীতিতে এসেছে। নেতা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব বিবাহিত, ইন্টারপাস ও বিতর্কিত। রাজাকারের নাতিও এই কমিটিতে আছে। আমরা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরা আসতে পারবে না।
পদবঞ্চিত নেতা ও গতকমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন বলেন, ৩৪ দিন যাচাই-বাছাই করে যে কমিটি দিয়েছে তা মেনে নেওয়ার মত না। সকল পোস্ট বিতর্কিতদের দিয়ে করা হয়েছে। সম্মেলন হওয়ার ২ দিন আগেও বাবু প্রার্থী ছিল না। সে সেলুনে চুল কাটার ব্যবসা করত। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব ইন্টার পাস। ৩-৪ বছর পড়াশুনা করে পাস করতে পারেনি। সে বিয়েও করেছে। তার পরিবারের ৮ জন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত কমিটিতে যে সহ-সভাপতি এখন ৭ বছর পর সে আবার সহ-সভাপতি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই কমিটি হাস্যকর। এটা আমাদের সঙ্গে রসিকতা করা হয়েছে। তারা সংগঠন শেষ করে দিয়েছে। আমরা এই সম্পূর্ণ কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।
বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, গত নভেম্বরে সম্মেলন হলে বাবু সেখানে কোনো প্রার্থীই ছিল না। কিছুদিন আগে সে রাজনীতিতে এসেছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব অছাত্র, বিতর্কিত। এই কমিটিতে পিএইচডি এমফিল শিক্ষার্থীরা আছেন। তাদের নেতা কিভাবে ইন্টারপাস হয়?
এ বিষয়ে জানতে সদ্য কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুজ্জামান লিটন চিন্তাভাবনা করেই এ কমিটি দিয়েছেন। যারা এ কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে তাদের ব্যক্তি স্বার্থ রয়েছে। শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সকলকে একত্রিত হওয়ার আহবান জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাকিবুল হাসান বাকী, অনিক মাহমুদ বনি, শামীম হোসেন, নিয়াজ মোর্শেদসহ অসংখ্য পদবঞ্চিত প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী।