রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছে না স্নাতক পাশ করা হাজার হাজার শিক্ষার্থী। এ নিয়ে তারা চরম ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এর আগে, ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন উপচার্য (ভিসি) আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে ২৫২তম শিক্ষা পরিষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পাস শিক্ষার্থীরাও সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন। তবে ভিসি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে গেল এ সিদ্ধান্ত।
অনেকের মাস্টার্সের পরীক্ষা শেষ হলেও রেজাল্ট প্রকাশিত হয়নি। ফলে তারাও সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আবার অনার্স শেষ করে অনেকেই মাস্টার্স প্রোগ্রামে অংশ নেন না। ফলে তারা আজীবনই বঞ্চিত থেকে যাবেন। তাই ২৫২তম শিক্ষা পরিষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, পরবর্তী সমাবর্তনে (দ্বাদশ) স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবারও স্নাতক পাশে সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।
রাবি প্রশাসন জানিয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে নভেম্বরে। এই সমাবর্তনে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের স্নাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম এবং ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এমফিল, এমডি ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারীগণ অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীদেরও সমাবর্তনে অংশগ্রহণে সুযোগ দেওয়ার কথা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, একাদশ সমাবর্তনের পর প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল স্নাতক পাশ করলেই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবে। কিন্তু তারা অংশগ্রহণ করতে না পারাই প্রশাসনের আশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছেন যাদের পারিবারিক প্রয়োজনে অনার্স শেষ করেই চাকরি করতে যেতে হয়। অনেক মেয়ের পক্ষে অনার্স শেষের পর বিভিন্ন কারণে মাস্টার্স করার ইচ্ছা থাকলেও তা হয়ে ওঠে না।
তাহলে কি আমরা সারাজীবন বঞ্চিতই থেকে যাব? সব স্নাতক ডিগ্রিধারী (যারা মাস্টার্স করেননি) সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আয়ুশী বনিক স্নেহা নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন বিবেকহীন কাজ দেখে লজ্জা হচ্ছে। অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের এক হয়ে বিষয়টি প্রশাসনের সাথে বসতে হবে। যেখানে একবার কথা হয়েছে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের সমাবর্তন দেওয়া হবে সেখানে এবার আবার উল্টো চিন্তা ভাবনা আসে কীভাবে? এটা কি শিক্ষার্থীদের বোকা বানানো হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয় কি কোনো স্কুল, কিন্ডারগার্টেন যে শিক্ষকরা নিজেদের সুবিধামতো ডিসিশন নিবে আর তাই মেনে নিতে হবে? প্রয়োজনে ভিসির বাসভবনের সামনে আন্দোলন করব। তিনি শত শত শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিতে পারেন না।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম সানজিদ রহমান বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হচ্ছে এটা খুবই আনন্দের সংবাদ। একজন শিক্ষার্থী বুভুক্ষুর মতো অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য। তবে সবার বাস্তবতা এক নয়। অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক করে চলে যায়। সবাই স্নাতকোত্তর করে না। যারা স্নাতক করে চলে গেছে তাদের সমাবর্তন হতে বঞ্চিত করা উচিত নয়। রেজিস্ট্রেশনের সময় যেহেতু এখনও আছে সেহেতু সমাবর্তনে স্নাতকদেরও সুযোগ দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এতে স্বপ্ন পূরণ হবে হাজারো শিক্ষার্থীর।
২৫২তম শিক্ষা পরিষদের সদস্য ও আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, বিশ্বের প্রায় সকল দেশে এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও স্নাতক পাসে সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে আমাদের শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবর্তনে সার্টিফিকেট নেওয়া আর টাকা দিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে সার্টিফিকেট নেওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ২৫২তম শিক্ষা পরিষদ সভায় স্নাতক পাশকারীরা সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আসন্ন দ্বাদশ সমাবর্তনে কেন সেই সুযোগটা রাখা হয়নি সেটা আমার বোধগম্য নয়। তবে আমি বলব, স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীদেরও সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, “অনার্সের সমাবর্তন প্রসঙ্গে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের যে সিদ্ধান্তটি ছিল, সেটি তখনকার প্রেক্ষাপটে নেওয়া হয়েছিল। আমরা এখনকার পরিস্থিতির উপর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোনো এক অ্যাকাডেমিক কাউন্সেলের সিদ্ধান্ত সারাজীবন বহাল থাকবে এমন কোনো বিধি নেই। সমাবর্তন নিয়ে বড় একটি কমিটি কাজ করে, সেখানেই এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়। এককভাবে এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।