রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করার জন্য উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে গেলে চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতা–কর্মীরা ধাক্কা দিয়ে শিক্ষকদের সরিয়ে দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের জটলার মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি শিক্ষকদের ‘গুলি করে দেওয়ার’ হুমকি দেন।
সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় উপাচার্য বাসভবনে সিন্ডিকেটের ৫০৬তম নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সকাল নয়টার দিকে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ, ডিবি সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দেখা যায়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রায় অর্ধশত সাবেক ও বর্তমান নেতা–কর্মী প্যারিস রোডে উপাচার্যের বাসভবনের পাশে অবস্থান নেন। এর পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও দেখা গেছে। এ সময় সাবেক উপাচার্যের অনুসারী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’ অংশের অন্তত অর্ধশত শিক্ষক উপাচার্যের বাসভবনের সামনের আমচত্বরে উপস্থিত ছিলেন।
সিন্ডিকেট সভা স্থগিতের আহ্বান
সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’ অংশের শিক্ষকেরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। প্যারিস রোডে অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম এবং অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী পৃথকভাবে বলেন, ‘৬ মে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ সময় আজ সিন্ডিকেট সভার কী প্রয়োজন? আমরা আশঙ্কা করছি, আজকের সভায় প্রচুর অ্যাডহক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, ইজারাসহ নানা অনিয়ম হতে পারে। তাই আমরা উপাচার্যের কাছে গিয়ে তাঁকে সভা স্থগিত করতে বলব।’
ছাত্রলীগের উপস্থিতি নিয়ে উত্তেজনা
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ক্যাম্পাসে ‘বহিরাগতদের’ থাকা নিয়ে প্রক্টর মো. লুৎফর রহমানের সঙ্গে শিক্ষকদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। শিক্ষকেরা প্রক্টরকে দ্রুত তাঁদের বাইরে বের করে দিতে বলেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, বহিরাগত ব্যক্তিরা ক্যাম্পাসে লাঠিসোঁটা এনে রেখেছেন। সেখানে অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী প্রক্টরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে আইডি কার্ড আছে। আপনি বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বের করে দেন।’ তবে সে সময় প্রক্টর এমন কোনো উদ্যোগ নেননি। এদিকে এ সময়ের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময়ে প্যারিস রোডেও অনেক নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষকদের গুলি করার হুমকি
সকাল ১০টা ১০মিনিটে শিক্ষকেরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাঁর বাসভবনে ঢুকতে যান। এ সময় গেটের সামনে থাকা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা বলেন, ‘না স্যার, ভেতরে ঢোকা যাবে না।’ এ বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের কথা-কাটাকাটি হতে থাকে। এমন সময় ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের সঙ্গে থাকা এক চাকরিপ্রত্যাশী বলে ওঠেন, ‘তাহলে কিন্তু স্যার গুলি করে দিব একদম।’ এতে শিক্ষকেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় ছাত্রলীগের একজন ওই চাকরিপ্রত্যাশীকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দেন। ওই চাকরিপ্রত্যাশীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ছাত্রলীগের দুটি সূত্র জানায়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকার বাসিন্দা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সঙ্গে ওঠাবসা করেন। তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের একজন।
শিক্ষকদের ছাত্রলীগের ধাক্কা
সকাল সোয়া ১০টার দিকে শিক্ষকেরা আবার উপাচার্যের বাসভবনে ঢুকতে যান। এতে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা তাঁদের ধাক্কা দিয়ে পেছনে সরিয়ে দেন। শিক্ষকেরা দ্বিতীয়বার ঢুকতে গেলে প্রক্টরসহ অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক সফিকুন্নবী ধস্তাধস্তির শিকার হন। ফলে শিক্ষকেরা পেছনে সরে এসে দাঁড়ান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা–কর্মীরা এসে বাসভবনের গেটে তালা লাগিয়ে সামনে অবস্থান নেন।
সিন্ডিকেট স্থগিত ঘোষণা
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বাসভবনের সামনে এসে সিন্ডিকেটের সচিব ও রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম ঘোষণা দেন, সিন্ডিকেট সভা আজকের মতো স্থগিত করা হয়েছে।