উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দ্বিতীয় দফায় লালমনিরহাটে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে সারারাত তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে জেলার চারটি উপজেলায় প্রায় আট হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সোমবার বিকেল ৩টার দিকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ডালিয়া ব্যারাজে ৪৪টি জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ৩০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে সদর উপজেলায় দেড় হাজার, আদিতমারীতে চার হাজার, কালীগঞ্জে এক হাজার এবং হাতীবান্ধায় এক হাজার আটশত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
জানা যায়, দ্বিতীয় দফার এ বন্যায় ৪ আগস্ট বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সরকারি পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের জন্য কোনো শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়নি। ফলে অনেকেই অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তবে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যাপ্ত খাবার মজুদ রয়েছে।
রাতভর পানি ঢুকে পড়ায় স্থানীয়রা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। বিশুদ্ধ পানি, শিশুদের খাবার, স্যানিটেশন সুবিধা এবং পশুখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু যাতায়াত সড়ক ধসে পড়েছে এবং কৃষি জমি ও মাছচাষে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের দিঘলটারী এলাকার বাসিন্দা সাবিত্রি রানী (৫০) বলেন, রাত থেকে ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে, রান্নাঘরও পানিতে ডুবে গেছে। সারাদিন রান্না করতে পারিনি। সরকারিভাবে কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি।
একই এলাকার সন্ধ্যা রানী (৫২) বলেন, আমি মাঠে কাজ করে খাই। এখন বন্যা এসেছে, কীভাবে খাব তা জানি না। বাজার থেকে আনা সামান্য শুকনো খাবার ছাড়া কিছুই নেই।
কালমাটি এলাকার সামসুল হক (৪৫) বলেন, আমাদের কষ্টের সীমা নেই। রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। সরকার আমাদের দিকে তাকায় না।
এ দিকে জামায়াত মনোনীত সদর-৩ আসনের প্রার্থী হারুন অর রশীদ প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। বুকসমান পানিতে নেমে তিনি নিজেই এসব খাবার পৌঁছে দেন। তবে কোনো বেসরকারি সংস্থা বা অন্য রাজনৈতিক দলকে পানিবন্দি এলাকায় দেখা যায়নি।
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শাহরিয়ার তানভীর আহমেদ বলেন, হাতীবান্ধায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী পানিবন্দিদের শুকনো খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশে ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি বা এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ সব জায়গা মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও ভাঙন দেখা দিলে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।