ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনি ও আলোচিত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় চার্জশিট দিয়েছেন মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। তাদের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এসব মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাপস কুমার পাল বলেন, পরীমনি-রাজের বিরুদ্ধে যে ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, তা সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর কারাদণ্ড। হতে পারে অর্থদণ্ডও।
পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণের জন্য আগামী ১৫ নভেম্বর আদালতে দিন ধার্য রয়েছে। মামলার অপর দুই আসামি হলেন- আশরাফুল ইসলাম দীপু ও কবির হোসেন। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে এ চার্জগ্রহণ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক কাজী মোস্তফা কামাল আদালতে পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর ৩৬(১) এর ১০(ক), ২৪(খ), ২৯(ক), ৩৮ ও ৪২(১) ধারায় অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে মর্মে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ৩১ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ শুনানি শেষে প্রতিবেদন দাখিল হওয়া পর্যন্ত পরীমনির জামিন মঞ্জুর করেন। পরদিন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্ত হন এ চিত্রনায়িকা। এরপর র্যাব বাদী হয়ে বনানী থানায় পরীমনি ও তার সহযোগী দীপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। সে মামলায় পরীমনিকে আদালতে হাজির করা হলে প্রথমে চারদিন ও পরে আরও দু’দফায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
জানা যায়, পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে মাদকসেবন করতেন। এজন্য বাসায় একটি ‘মিনিবার’ তৈরি করেন। সেখানে নিয়মিত ‘মদের পার্টি’ করতেন। চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের সরবরাহ করতেন ও বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিতেন।
অভিযোগ প্রমাণ হলে যে শাস্তি হতে পারে পরীমনির
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় মামলা হয়েছে, এরমধ্যে ৩৬ (১) এর সারণি ২৪(খ) ধারায় বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ১০ কেজি বা লিটারের বেশি এবং ১০০ কেজি বা লিটারের কম হলে কমপক্ষে তিন বছর ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হবে।
৩৬ (১) এর সারণি ১০ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্যের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম বা মিলিলিটার হলে কমপক্ষে এক বছর ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছরে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হবে।
৩৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি সজ্ঞানে মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটনের জন্য তাহার মালিকানাধীন অথবা দখলি কোনো বাড়িঘর, জায়গাজমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, যন্ত্রপাতি অথবা সাজসরঞ্জাম কিংবা কোনো অর্থ অথবা সম্পদ ব্যবহার করিতে অনুমতি প্রদান করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৫ (পাঁচ) বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
৪১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটনে কাউকে প্ররোচনা দিলে অথবা সাহায্য করলে অথবা কারও সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে অথবা এ উদ্দেশ্যে কোনো উদ্যোগ অথবা চেষ্টা করলে মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটিত হোক বা না হোক, তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মতো দণ্ড পাবেন।
৪২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি এ আইন অথবা বিধির কোনো বিধান লঙ্ঘন করে যাতে স্বতন্ত্র কোনো দণ্ড নেই, তাহলে তিনি ওই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
রাজের মাদক মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত
রাজধানীর বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় আলোচিত প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ইসলাম রাজ ও তার সহযোগী সবুজ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত মামলার নথি গ্রহণ করেছেন। তবে পরবর্তী শুনানির দিন এখনো ধার্য হয়নি।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিন। এর আগে ২৫ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদার এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
অভিযোগপত্রে রাজের সহযোগী সবুজ আলীকেও আসামি করা হয়েছে। অপরদিকে ঝন্টু মিয়ার পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাকে আপাতত মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়েছে ১৮ জনকে। সবুজ ছিলেন রাজের অফিসের পিয়ন।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, রাজ ২০১৪ সাল থেকে নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে বিনিয়োগ শুরুর পর এক পর্যায়ে ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’ নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এসময় বিভিন্ন ক্লাবে গিয়ে মাদকসেবন ও বেচাকেনা করতেন তিনি। মাদক কারবারের কাজে তার নিজস্ব দুটি জিপ গাড়ি ব্যবহার করা হতো।
রাজের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮-এর ৩৬ (১) এর ২৪ (খ)/১০(ক)/৩৮ ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে মাদক কারবারের কাজে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করায় সবুজ আলীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর ৩৬ (১) এর ২৪ (খ)/১০(ক)/৩৮/৪১ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত।
গত ৪ আগস্ট বিকেলে চিত্রনায়িকা পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। প্রায় চার ঘণ্টার অভিযান শেষে ওইদিন রাত ৮টার দিকে তাকে আটক করে র্যাব সদরদপ্তরে নেওয়া হয়। আটককালে নায়িকার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করার কথা জানায় পুলিশের এ এলিট ফোর্স।
একইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে নজরুল ইসলাম রাজের বনানীর বাসায়ও অভিযান শুরু করে র্যাব। অভিযান শেষে রাজকে রাত ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে আটক করে নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা। রাজের বাসা থেকেও মাদক ও পর্নোগ্রাফি তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব।
এরপর ৫ আগস্ট পরীমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে র্যাব বাদী হয়ে একটি মামলা করে। আর রাজের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনে আলাদা দুটি মামলা করা হয়। বর্তমানে রাজ কারাগারে রয়েছেন। আর জামিনে আছেন পরীমনি।
রাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে শাস্তি
রাজের বিরুদ্ধেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬(১) এর ২৪(খ)/১০(ক)/৩৮, ৩৬ (১) এর সারণি ২৪ (খ), ৩৬ (১) এর সারণি ১০ (ক) ও ৩৮ ধারা অনুযায়ী শাস্তি হবে।