বিএনপি নেতারা উচ্চ আদালতের রায়কে নিজেদের আন্দোলনের বিজয় হিসেবেই দেখছেন, যেখানে ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ গ্রহণে আর কোনো বাধা নেই বলে সিদ্ধান্ত আসে। দলটি বলছে, এখন তাদের মূল লক্ষ্য ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায় করা। এ লক্ষ্য সামনে রেখে ঈদুল আজহার পর জুন মাস থেকে আরও কার্যকর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
এ প্রেক্ষাপটেই গুলশানে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা—আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের অপসারণ দাবি করেছে। একইসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকেও অব্যাহতির আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপি বলছে, সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত, যা সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে উপদেষ্টাদের বহাল রাখা সরকারের নির্দলীয় অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলেও অভিযোগ তুলেছে দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপির সমর্থন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের উচিত দ্রুত একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা, যার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে।’
দীর্ঘ ৩১ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথের দাবি জানায় বিএনপি। হাইকোর্টের রায় তাদের পক্ষে এলে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেন ইশরাক। তিনি বলেন, ‘সরকার এখন কী পদক্ষেপ নেয়, তা ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন, সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা উপদেষ্টা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ ছাড়া দূর হবে না। এসব দাবির বিষয়ে আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।
ইশরাক আন্দোলনের ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি দাবি করেন, সরকার যদি জনগণের ন্যায্য অধিকার অবহেলা না করত, তাহলে এমন কর্মসূচির প্রয়োজন হতো না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সরকার চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের মনে সরকারের সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করছে। সরকারের দেরিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা দেশে একটি অস্থির রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
এছাড়া, দলটি তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করে, রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং এর সাথে নির্বাচন প্রক্রিয়াও চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতারা স্পষ্ট করে বলেন, তাদের কর্মসূচির সার্বিক মূল্যায়ন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর। যদি সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির উপস্থাপিত সুপারিশ ও দাবি উপেক্ষা করা হয়, তবে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে আর সহযোগিতা করবে না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এই সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।