চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের একটি আবাসিক এলাকার ২০১৯ সালের ২৮ মের সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র। বহুতল ভবনে বসবাস করতেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল মোরশেদ চৌধুরী। পার্কিং এলাকায় দুটি গাড়ি থেকে ফিল্মি স্টাইলে নামেন কয়েক জন যুবক। গাড়িতে বসা ছিলেন এক হুইপপুত্র ও আরশাদুল আলম বাচ্চু। তাদের সহযোগী পারভেজ ইকবাল, রিয়াদসহ কয়েক জন ওই ভবনের মোরশেদের ফ্ল্যাটে গিয়ে চালায় তান্ডব। এরপর থেকে কথিত ঋণ পরিশোধ করতে দিতে থাকেন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ। ক্রমাগত চাপ সইতে না পেরে গত ৭ এপ্রিল বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করেন ব্যাংক কর্মকর্তা মোরশেদ চৌধুরী। এ ভাবেই ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহত্যার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ঘটনার বর্ণনা দেন মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী।
এ ঘটনায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, জাবেদ ইকবাল, পারভেজ ইকবাল এবং নাইম উদ্দিন সাকিব নামে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মোরশেদের পরিবার। অভিযোগ রয়েছে মামলার পর চার দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেফতার করেনি। এমন অবস্থায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে তাদের পরিবার। পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘মোরশেদকে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
নিহতের স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী অভিযোগ করেন- মোরশেদ ব্যবসার জন্য জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, পারভেজ ইকবাল চৌধুরী এবং সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দিনের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় ২৫ কোটি টাকা ধার নেন। বিপরীতে তাদের কাছে লাভসহ ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু তারা বেশি লভ্যাংশের দাবিতে স্বামীর ওপর মানসিক চাপ, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক চাপপ্রয়োগ করতে থাকেন। তাদের অনৈতিক চাপের কারণে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছেন। সুইসাইড নোটে তিনি সব ঘটনা বলে গেছেন। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় মামলা করা হলেও এখনো পর্যন্ত পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এখন আসামি পক্ষ উল্টো মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।
মোরশেদ আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোটও লিখে যান। যাতে উল্লেখ করেন- ‘আর পারছি না। সত্যি আর নিতে পারছি না। প্রতিদিন একবার করে মরছি। কিছু লোকের অমানুষিক প্রেসার আমি আর নিতে পারছি না। প্লিজ, সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার জুমকে (মেয়ে) সবাই দেখে রেখো। আল্লাহ হাফেজ।’
নিহতের পরিবারের অভিযোগ- ব্যবসার প্রয়োজনে চেক জামানত সাপেক্ষে টাকা ধার নিলেও অর্থ পরিশোধের পরও চেক ফেরত দেয়নি অভিযুক্তরা। কৌশলে টাকা ফেরত নেওয়ার পরও চেক ডিজঅনার মামলা করে। প্রভাব খাটিয়ে তুলে নিয়ে অস্ত্রের মুখে শারীরিক নির্যাতন, জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপণ্য করার কারণে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আবদুল মোরশেদ চৌধুরী আত্মহত্যা করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকায় নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় আবদুল মোরশেদ চৌধুরীর লাশ উদ্ধার করে পুুলিশ। মোরশেদ মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাংক আল ফালাহ্ আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।