গঠিত কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক ও আওয়ামীপন্থী রাজনীতির সাথে যুক্ত আমির শরীফ। আর নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের বর্তমান কার্যকরী সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানজিদ ইসলাম ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক বিপুল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এখানে আওয়ামী লীগের তিনটি ভাগের মধ্যে নীল দলের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯০ জন। এছাড়া প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের মধ্যে দুটি ভাগে আরও ৯০ জন শিক্ষক রয়েছেন। নীল দল ও প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একটি অংশ বিগত প্রশাসনের সাথে থাকায় এই দুই অংশের নেতারা অনেকটাই বেকায়দায় আছেন। অনেকেই গা ডাকা দিয়েছেন। তবে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আরেকটি অংশ নির্বাচনে বিনা ভোটেই নির্বাচিত হবে বলে আশা করছে। তারা নির্বাচিত হলে বর্তমান প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলবে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
তড়িঘড়ি করে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেখানে সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেখানে আওয়ামী শিক্ষকদের ক্ষমতায় আনার জন্য পাতানো নির্বাচন আবু সাঈদের রক্তের সাথে বেঈমানি। এই নির্বাচন প্রক্রিয়া অনতিবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
ভাগাভাগির নির্বাচনকে প্রহসন ও পাতানো বলে আখ্যায়িত করছেন অনেকেই। শিক্ষকরা বলছেন শিক্ষক সমিতি সবসময় রাজনীতির নামে অপরাজনীতিতে লিপ্ত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে এরকম পাতানো নির্বাচন আয়োজন না করার পরামর্শ সাধারণ শিক্ষকদের। জুলাই আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে থাকা শিক্ষক ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা মনে করেন, এ নির্বাচনে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসিত করা হবে।
নির্বাচনের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নীলদলের সভাপতি ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নিতাই কুমার ঘোষ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা নির্বাচন নিয়ে আপাতত ভাবছি না। দেখা যাক, সামনে কী করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিএনপিপন্থী শিক্ষক ফেরদৌস রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করব। যেহেতু আমাদের এখানে কোনো গঠনতন্ত্র নেই, এজন্য আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হবে, এটা আমিও শুনলাম। কিন্তু বিগত সময়ে এই শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কী করেছে সেটা আমার প্রশ্ন। শিক্ষক সমিতির কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, শিক্ষার গুণগত পরিবেশ নিয়ে কাজ করা। কিন্তু তা না করে বিগত শিক্ষক সমিতির নেতারা নিয়োগ বাণিজ্য, দলাদলিতে লিপ্ত ছিলেন। এটা আর হতে দেওয়া যাবে না। যেখানে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নির্বাচন করছে না, সেখানে আমাদের নির্বাচন কীভাবে হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী দোসররা এখনো রয়ে গেছে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে, যাতে কোনোভাবেই এরা ফিরে আসতে না পারে। এরা ফিরে এলে শহীদ আবু সাইদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি বিজন মোহন চাকীকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আমির শরীফ ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি এটা নিয়ে আপাতত কাজ শুরু করিনি। আগে সবার পরামর্শ নেব, তারপর কাজ শুরু করব। নাহলে আমি এই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াব।
রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরও আপনারা নির্বাচন করছেন কেন, এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, গঠনতন্ত্রে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা জানুয়ারির ২০ বা ২২ তারিখে। তাই নির্বাচন হওয়ার জন্য শিক্ষক সমিতি আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে। প্রয়োজনে আমি দায়িত্ব থেকে সরে আসব।