রংপুরে ২০০ মানুষের মুখে লটারির কুপন তুলে হাসি ফুটেছে । বিনামূল্যের এ কুপনে মিলেছে ১১ প্রকারের খাদ্য সহায়তা। উপকারভোগী সবাই ছিলেন অসহায়, দুস্থ ও নিম্নআয়ের মানুষ। বিনামূল্যে লটারির কুপনে খাদ্য সহায়তা প্রদানের ব্যতিক্রম এই কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রিজিকের মালিক আল্লাহ’।
২১ এপ্রিল দুপুরে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বরে সহায়তামূলক এই ভিন্ন আয়োজন করেন ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথি। লটারির মাধ্যমে বিতরণ করা হরেক রকম খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে চাল, ডাল, গরুর মাংস, মুরগি, ডিম, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, মুড়ি, ছোলা ও সেমাই ছিল। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলে এসব খাদ্য বিতরণ।
উপকারভোগীদের জন্য একটি বড় র্যাকের থাকে থাকে সাজানো ছিল রকমারি খাদ্যসামগ্রী। খাচাঁয় ছিল মুরগি। এ ছাড়া ৫০০ গ্রামের গরুর মাংসের প্যাকেট, ৩ কেজি চাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১০টি করে ডিম ও একটি করে সেমাইয়ের প্যাকেট ছিল। সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় তেল, ডাল, চিনি, লবণ, মুড়ি ও ছোলা ছিল। এ সবের পরিমাণ ছিল আধা কেজি করে।
র্যাকের পাশের টেবিলে ছিল খাদ্যসামগ্রী নির্ধারণে লটারির কুপন বক্স। উপকারভোগীরা সেই বক্স থেকে কুপন তুলে লেখা খাদ্যসামগ্রী নিজ হাতে প্যাকেটে ভরে নিয়েছেন। তাদেরকে এই কাজে সহযোগিতা করছেন উদ্যোক্তা বিথিসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীরা।
‘রিজিকের মালিক আল্লাহ’ এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, অসহায় নারী ও পুরুষ বিনামূল্যে লটারির কুপনের মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রীর মধ্য থেকে কুপনে লেখা খাদ্য সংগ্রহ করেন। একেকজন একটি কুপনের মাধ্যমে তিন রকমের খাদ্য সামগ্রী পেয়েছেন।
লটারির মাধ্যমে মাংস, চাল ও সেমাই পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয় নুর আলম নামে এক দুস্থ ব্যক্তি। দুই হাতে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট নিয়ে হাসি মুখে এই উপকারভোগী বলেন, মুই রাস্তা দিয়ে যাবার সময় লটারি কাটি এই উপহারগুল্যা পানু। মোক খুব ভালো লাগছে।
এই কর্মসূচীর আওতায় তিনি গরুর মাংস পেয়ে খুশি হন ভিক্ষুক রহমত আলী। তিনি বলেন, মেলা টাকার গোস্ত পানু বাহে। হাফ কেচি গরুর গোস্ত। মোর ওপর আল্লাহর রহমত হইছে। এই আয়োজনটাও খুব ভালো।
প্রতিবন্ধী আলমা খাতুন জানান, তিনি বিনামূল্যে এই লটারির কুপনে চাল ও ডাল পেয়েছেন। এক দিনের খাবার পেয়ে তিনিও খুশি। আরেক উপকারভোগী জাহানারা বেগম মোর সামনোত একজন একটা মুরগী পাইছে। মুইয়ো তখন ভাবছু যদি লটারির মোর ভাগ্যেত একটা মুরগি জোটে। আল্লাহর রহমতে মুইয়ো মুরগি আর তেল পাচু।
ব্যতিক্রম এই আয়োজন প্রসঙ্গে ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথি জানান, একেবারে সমাজের পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য এই আয়োজন। ‘রিজিকের মালিক আল্লাহ’ এই কর্মসুচির মাধ্যমে ২০০ মানুষের মাঝে ১১ প্রকারের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এটি ঈদ উপলক্ষে করা হয়েছে। অন্যান্য কর্মসূচিগুলো চলমান রয়েছে।
সাবেক এই ক্রিকেটার বলেন, মাহে রমজানে ইফতার বিতরণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ২০০ রোজাদারের মাঝে ইফতারের প্যাকেট বিতরণ করেছি। পুরো রমজানে ছয় হাজার রোজাদারকে ইফতার দেওয়া হবে। গত বছরও করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষদের মধ্যে ইফতার বিতরণ করা হয়েছে। খিচুড়ি, ডিম, ভাত, সবজি, ডাল, মুরগি, গরু, বিরিয়ানি, বুট বিরিয়ানি, খেজুর ও শরবত ইত্যাদিসহ একেক দিন একেক আইটেম থাকছে প্যাকেটে।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির শুরুর দিকে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সেবার জন্য ফেসবুকে সবার কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছেন বিথী। ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, রুবেল হোসেনসহ অনেকের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলেন। এক বছরে সাড়ে চার হাজারের মতো অসহায়, দুস্থ, কর্মহীন মানুষের পাশাপাশি সন্তানসম্ভবা নারীকে সেবা দিয়েছেন সাবেক এই ক্রিকেটার। নিজের জমানো টাকা আর অন্যের আর্থিক সহযোগিতার সমন্বয়ে কয়েক হাজার মানুষের দুয়ারে চাল, ডাল, তেল, লবণ, ফল, দুধ, ডিম ও হরলিক্সসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।
এ ছাড়া ১৯ জন অসহায় নারীকে করোনার সময়ে সেলাই মেশিন দিয়ে স্বাবলম্বী করেছেন বিথী। ঘরহীন ছয়জন বৃদ্ধা মাকে দিয়েছেন নতুন ঘর। সহায়-সম্বলহীন ২১ জন শিক্ষার্থীকে কলেজে ভর্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে রংপুর জেলা স্টেডিয়ামে নারীদের জন্য উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি নামে প্রশিক্ষণ একাডেমি গড়েন বিথী। সেখানে ২৫০ জন নারী বিনামূল্যে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
আরিফা জাহান বিথী ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলেছেন। ঢাকার ওরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাব, কলাবাগান, রায়েরবাজার ক্রিকেট দলে ওপেনিং ব্যাট করতে নামতেন। ২০১৭ সালে অসুস্থতার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে হয়েছে তাকে।