রংপুরের কাউনিয়ায় চার দিন ধরে নিখোঁজ থাকা সেই তিন শিশু বাড়ি ফিরে এসেছে। তবে তারা নিখোঁজ নয়, বরং বঙ্গবন্ধু সেতু দেখতে কাউকে না জানিয়ে ট্রেনে করে ঢাকায় গিয়েছিল বলে জানিয়েছে। বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে তারা বাড়ি ফিরে আসে। এর আগে গত ৩০ জুলাই শনিবার উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের মীরবাগ বাজার এলাকায় স্কুলের মাঠে খেলা দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হয় তারা।
তারা হলো উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের নুর আলমের ছেলে ধর্মেশ্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাজেদুল ইসলাম (১১), একই গ্রামের শফিকুল ইসলামের (ছাইমুদ্দিন) ছেলে মনিরুল ইসলাম (১০) ও গদাধর গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে মাদরাসাছাত্র আব্দুল্লাহ আল পলাশ (১৩)। তারা সম্পর্কে তিন বন্ধু।
বাড়ি ফিরে আসা সাজেদুল জানায়, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তারা তিন বন্ধু মিলে বঙ্গবন্ধু সেতু দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। গত শনিবার স্থানীয় মাঠে খেলা দেখতে যায় তারা তিনজন। পরে তারা কাউনিয়া স্টেশনে গিয়ে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে ঢাকায় যায়। তাদের কাছে টাকা না থাকায় তারা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের পাশে একটি হোটেলে কাজ করে ৫০০ টাকা আয় করে। সেই টাকা দিয়ে ট্রেনের টিকিট কেটে বুধবার তিন বন্ধু মিলে বাড়িতে চলে আসে।
একই কথা জানায় আব্দুল্লাহ আল পলাশ ও মনিরুল ইসলাম। শুধু পদ্মা সেতু দেখার পরিকল্পনা থেকেই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নিখোঁজ ছিল না। বরং তাদের মা-বাবার প্রতিও অভিমান ছিল বলেও জানা গেছে।
আব্দুল্লাহ আল পলাশের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, ছাওয়া তো কওছে ওমরা বোলে বঙ্গবন্ধু সেতু দেইকপার জনতে বাড়ি থাকি ঢাকাত গেছল। ফির কায়ো কায়ো ওমার বাপ-মায়ের ওপর রাগ করি এটা করছে। যে কারণেই হউক তিন বন্ধু মিলি হামাক না জানেয়া নিখোঁজ থাকাটা ঠিক হয় না। আজই সাংবাদিক ভাইয়েরা পেপার-পত্রিকায় খবর করছে দেকি ছাওয়ারা ভয়ে তো বাড়ি চলি আসছে। ওই তকনে থানা-পুলিশ থাকি শুরু করি সাংবাদিক ভাইয়ের সবাগে হামার কৃতজ্ঞতা।
এ বিষয়ে কাউনিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, গত সোমবার এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছিল। তবে নিখোঁজ তিন শিশু দুপুরে বাড়ি ফিরে এসেছে। তারা পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে ঢাকায় গিয়েছিল। নিখোঁজ তিন শিশু বাড়ি ফিরে আসায় তাদের পরিবারের লোকজন আনন্দিত।
অন্যদিকে রংপুর জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) আশরাফুল আলম পলাশ জানান, ওই তিন শিশু তাদের অভিভাবকদের ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। এ বিষয়ে তাদের অভিভাবকরা থানায় জিডি করলে পুলিশ তাদের উদ্ধারের জন্য তৎপরতা শুরু করে। এর মধ্যেই বুধবার দুপুরে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। এ বিষয়ে শিশু ও তাদের অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করা হয়েছে।
কীভাবে তারা ঢাকায় গিয়েছিল এবং তাদের ফিরে আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ওই তিন শিশু গত ৩০ জুলাই বিকেলে ধর্মেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে খেলা দেখার সময় প্রথমে তিস্তা সেতু দেখার পরিকল্পনা করে। সেদিন বিকেল ৫টায় মীরবাগ রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে কাউনিয়া স্টেশনে গিয়ে নামে তারা।
সেখানে তারা পুনরায় সিদ্ধান্ত নেয়, ট্রেনে করে বঙ্গবন্ধু সেতু দেখতে যাবে। কিন্তু সন্ধ্যা হওয়ার কারণে তারা বাসায় ফিরে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলেও হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হলে হেঁটে কাউনিয়ার হলদিবাড়ি রেলগেটের সামনে জনৈক এক ব্যবসায়ীর দোকানে অবস্থান নেয়। সেদিন বৃষ্টি না কমায় ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে রাত্রিযাপন করে পরের দিন সকালে তাদের বাড়ি মীরবাগে মিথ্যা কথা বলে ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে বের হয়।
এএসপি জানান, ৩১ জুলাই সকালে আবার কাউনিয়া রেলস্টেশনে গিয়ে শান্তাহারগামী ট্রেনে ওঠে তারা। এই ট্রেন বঙ্গবন্ধু সেতু যাবে না, তখন তারা অন্নদানগর স্টেশনে নেমে যায়। এ সময় এক পান দোকানদার সব কিছু শুনে তাদের বাড়ি ফিরে যেতে বললেও তারা আবার ঢাকাগামী অন্য একটি ট্রেনে গিয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু সেতু দেখার জন্য ট্রেনে উঠলেও যাওয়ার সময় ঘুমিয়ে পড়াতে সেতু দেখা হয়নি। এভাবে ৩১ জুলাই দিবাগত রাতে ঢাকায় কমলাপুর রেলস্টেশনে নামে এবং সেখানেই রাতযাপন করে।
এএসপি আরও বলেন, সোমবার ১ আগস্ট রেলস্টেশনে একটি হোটেলে ওয়েটারের কাজ শুরু করে ওই তিন শিশু। পরের দিন মঙ্গলবার হোটেল থেকে পালিয়ে আবার রাতে রংপুর এক্সপ্রেসে করে বুধবার সকাল ১০টায় রংপুরে ফিরে আসে। পরে অটোরিকশা ও বাসে করে দুপুর ২টার দিকে কাউনিয়াতে তারা নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে যায়। বর্তমানে ওই তিনজনই সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে।