জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে আগের বছরের চেয়ে বরাদ্দ মাত্র ১৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। নতুন ১৪ লাখ মানুষকে এর আওতায় আনা হয়েছে। তবে নগর দরিদ্রসহ আড়াই কোটি নতুন দরিদ্রের জন্য তা অপ্রতুল। সরকারি প্রতিবেদনই বলছে, যোগ্য না হয়েও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ভাতা নেন ৪৬ শতাংশ মানুষ। জনসংখ্যার সঠিক ডাটাবেস না থাকায় এবং অনিয়মের কারণে অনেকে যোগ্য হয়েও এই কর্মসূচিগুলো থেকে বাদ পড়ছেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীতে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাজেট ২০২১-২২ :করোনাকালে জীবন ও জীবিকা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান করোনার প্রভাবে দেশের অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার আরো নিচে চলে গেছে। শ্রমিক ও কর্মজীবী মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার জীবন যাপন করছেন। শহরের অনেক মানুষ গ্রামে ফিরছে, অভিবাসীরা তাদের চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বৃদ্ধি করলেও করোনার কারণে নতুন যুক্ত হওয়া দরিদ্ররা এতে দৃশ্যমান নয়।
খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এবারের বাজেটে দারিদ্র্য ও ন্যায়বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, তবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। আর কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নে দরকার উপকারভোগীর সঠিক তথ্যভান্ডার। ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করতে না পারলে বাংলাদেশের নড়বড়ে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ঘটবে না। গ্রামীণ অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ভেঙে পড়বে।
অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, করোনার কারণে নতুন দারিদ্র্য বেড়েছে এবং দারিদ্র্যের হার তিন দশক আগের হারে পৌঁছে গেছে। এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়ানো হলেও মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়েনি। ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ছোট ছোট অনেক উপখাতের বরাদ্দ কমানো হয়েছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্যও পর্যাপ্ত বরাদ্দের সুযোগ নেই।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, করোনার কারণে দেশের বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নতুন করে দারিদ্র্য ঝুঁকি বেড়েছে। এক গাণিতিক হিসাবে দেখা গেছে, ৯ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ খাদ্য দারিদ্র্যে ভুগছে। চলমান পরিস্থিতির উত্তরণে তিনি দরিদ্রদের ডিজিটাল তথ্যভান্ডার (নতুন দরিদ্রসহ) তৈরি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নতুন দরিদ্রদের অন্তর্ভুক্ত করা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ, বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি এসব খাত বাদ দেওয়া, ওএমএসের কার্যক্রম আরো বাড়ানোসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন।