মানিকগঞ্জের সিংগাইর-হরিরামপুর ও সদর উপজেলার তিনটি (পুটাইল, ভাড়ারিয়া, হাটিপাড়) ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-২ সংসদীয় আসন। এই আসনের দুই বারের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগমের তিন সৎ বোন নৌকা ছেড়ে প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলুকে সমর্থন করেছেন। এতে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতাকে নিয়ে মমতাজের কটূক্তি ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এখন ভোটারদের কাছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ ছাড়া হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে দলীয়ভাবে কোণঠাসা দুইবারে সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগম।
জানা গেছে, গত শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মমতাজ বেগমের নিজ গ্রাম পূর্ব ভাকুম এলাকায় নির্বাচনী উঠান বৈঠকের আয়োজন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জাহিদ আহমেদ টুলুর কর্মী-সমর্থকরা। ওই বৈঠকে প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গলায় ফুলের মালা দিয়ে তাকে সমর্থন জানান মমতাজ বেগমের তিন সৎ বোন। এতেই আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন তারা।
পারিবারিক এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বাবা প্রয়াত মধু বয়াতির প্রথম স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের তিন সন্তান রেহেনা বেগম, জাহানারা বেগম ও শাহনাজ পারভীন। সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের পূর্ব ভাকুম গ্রামের মধু বয়াতির দ্বিতীয় স্ত্রী উজালা বেগমের সন্তান মমতাজ বেগম। অর্থাৎ ওই তিনজন মমতাজ বেগমের সৎ বোন। জমিজমাসহ পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মমতাজের সঙ্গে তার তিন বোনের বিরোধ রয়েছে। এ কারণে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মমতাজ বেগমের পাশে নেই তিন বোন।
মমতাজ বেগমের নিজ ইউনিয়ন জয়মন্টপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেনও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। ওই উঠান বৈঠকেও চেয়ারম্যান শাহাদৎ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন। উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল ইসলাম। ওই বৈঠকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলু আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তিন বোনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মমতাজের বোন শাহনাজ বেগম স্থানীয় জয়মন্টপ ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য। তিনি জানান, পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যয় মমতাজ বেগমকে তারা পাশে পাননি। উল্টো জমিজমা ও সম্পত্তি বণ্টনে বৈষম্য করেছেন। এ কারণে তারা ক্ষোভে বোনের প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন।
তবে মমতাজ বেগমের ঘনিষ্ট অনুসারী সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমান জানান, মমতাজ বেগমের আপন কোনো বোন নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদেরও আত্মীয়-স্বজনরা মমতাজ বেগমের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগমের তিন বোনের সমর্থনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জাহিদ আহমেদ টুলু বলেন, এটা আল্লাহ রহমত, তারাও এই আসনে একজন্য যোগ্য, ন্যায়-আদর্শবান ব্যক্তিকে এমপি হিসেবে দেখতে চান। এজন্য নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগমের তিন বোন আমাকে সমর্থন করেছেন। আমার দুয়ার সবার জন্য খোলা, তার (মমতাজ) বোন বা ভাই হোক, আমি এই আসনের সকল ভোটারদের আহ্বান জানাবো, আসেন আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ট্রাক মার্কার দলে যোগ দিয়ে আমরা একটা সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেব।
এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে মানিকগঞ্জ-২ আসনের নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস মমতাজ বেগমের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।