যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংসদীয় কমিটিতে। বিশেষ করে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। কমিটির পক্ষ থেকে পদোন্নতির বিতর্কিত আদেশ বাতিল, দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও শূন্যপদে পদোন্নতির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ওই সুপারিশ করা হয়।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অনিয়ম ও দুনীতির একাধিক অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সাবেক উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করা হয়।
সভায় বলা হয়, ওই কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা এবং আদালত ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানেননি। নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ১১২ জন সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ তাদের কয়েকজন চাকরিতে জুনিয়রই নন, তাদের পদোন্নতি পাওয়ার মতো কোনো দক্ষতা নেই। মহাপরিচালক মো. আজাহারুল ইসলাম খান ওই আদেশে স্বাক্ষর করলেও এই অনিয়মের মূলহোতা মোখলেছুর রহমান। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক বিভাগীয় মামলা থাকলেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বৈঠক সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর ১১২ জন সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পদে চলতি দায়িত্ব দিয়ে এক আদেশ জারি করা হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্যের চিত্র উঠে আসে। পরে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতও ওই আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে আদেশটি বাতিলের নির্দেশনা দেয়।
২০২২ সালের ১৮ জুলাই দেওয়া আদালতের আদেশটি বাস্তবায়ন না করে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে কিংবা সুবিধাজনক স্থানে তাদের পোস্টিং দেওয়া হয়। এই অনিয়মের কারণে অন্তত ৭০ জন পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। আবার ১১৫ জনের পদোন্নতির প্রস্তাব প্রস্তুত থাকলেও তা মহাপরিচালকের অনাগ্রহের কারণে বাস্তবায়ন হয়নি বলে বৈঠকে দাবি করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমানের অপরাধ এবং তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ১১৫ জন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পদে অবৈধ চলতি দায়িত্বাদেশ বাতিল করে জ্যৈষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও এন এম নাইমুর রহমান দুর্জয়সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।