ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার তেল-গ্যাস-কয়লার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা; কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার ফলেই জ্বালানি রপ্তানিবাবদ আয় বেড়েছে দেশটির।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও দেশটির জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ক সাবকে দূত আমোস হোচস্টেইন দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের একটি উপকমিটিকে এ তথ্য দিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রাশিয়াভিত্তিক ইংরেজি সংবাদমাধ্যম আরটি।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহায়তা বিষয়ক একটি বৈঠকে অংশ নিতে বর্তমানে ইউরোপে অবস্থান করছেন সিনেটের ওই উপকমিটির সদস্যরা। হোচস্টেইনের সঙ্গেও তাদের বৈঠক হয়েছে ইউরোপেই।
বৈঠকে সিনেট সদস্যরা তাকে প্রশ্ন করেন, নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস বিক্রি বাবদ রাশিয়ার আয় বেড়েছে কিনা। উত্তরে এই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা আমি অস্বীকার করতে পারি না।’
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে দুই মাসেরও বেশি সময় সীমান্তে সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। তার দু’দিন আগে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
এদিকে ইউক্রেনে রুশ বাহিনী অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ। নিষেধাজ্ঞার প্রথম পর্যায়ে, অর্থাৎ মার্চের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, কিছু পেট্রোলিয়াম পণ্য, তরলীকৃত জ্বালানি গ্যাস এবং কয়লা আমদানি নিষিদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউরোপ অবশ্য শুরুতেই রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। প্রথম পর্যায়ে রাশিয়ার ব্যাংক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছিল ইউরোপের লক্ষ্যবস্তু; কিন্তু গত মে মাসের শেষ দিকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
ইইউয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি জুন থেকে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ৭৫ শতাংশ কমানো হবে এবং বছরের শেষ নাগাদ এই হ্রাসের হার পৌঁছাবে ৯০ শতাংশে। তবে হাঙ্গেরিসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ রুশ জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞায় আপত্তি জানানোয় তাদের ওপর ইইউয়ের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে না বলে জানিয়েছেন জোটের নেতারা।
এদিকে, রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার স্পিকার ভিয়েচেস্লাভ ভলোদিন সম্প্রতি এক পার্লামেন্ট অধিবেশনে বলেছেন, যুদ্ধের আগে প্রতিমাসে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে যে পরিমাণ জ্বালানি কিনত, গত মার্চে তার দ্বিগুণ পরিমাণ জ্বালানি দেশটিতে পাঠিয়েছে রাশিয়া।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, কেবল এপ্রিল মাসেই আন্তর্জাতিক বাজারে ৩ লাখ ব্যারেল (৪ কোটি ৭৭ লাখ লিটার) জ্বালানি তেল রপ্তানি করেছে রাশিয়া।
আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ২০২২ সালের শুরুর সময়ের তুলনায় বর্তমানে জ্বালানি তেল রপ্তানি বাবদ রাশিয়ার আয় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে রাশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের কিছু দেশ রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল প্রচুর পরিমাণে কিনছে। এসব দেশের মধ্যে ভারত অন্যতম বলে জানিয়েছে আরটি।