করোনা মহামারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র রেমিট্যান্স-প্রবাহ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। করোনা শুরু হওয়ার পর শীর্ষ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স কমলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেড়েছে। ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলে রেমিট্যান্সের উত্স দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্হান করে নিয়েছে দেশটি। এর ধারাবাহিকতায় গত মার্চেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন দেশটির প্রবাসীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের তুলনায় এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে টাকা পাঠানো সহজ হয়েছে। এছাড়া বৈধ পথে প্রণোদনা পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি মহামারিতে দেশে স্বজনদের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রবাসীরা আগের তুলনায় বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে বরাবরই সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। এর পরই ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্হান। তা ডিঙিয়ে দ্বিতীয়তে এখন যুক্তরাষ্ট্র আর তৃতীয়তে উঠে এসেছে যুক্তরাজ্য। একসময় দ্বিতীয় থাকা আরব আমিরাতের অবস্হান এখন চতুর্থ অবস্হানে। বাংলাদেশের প্রবাসীদের বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। বিভিন্ন সংস্হার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২২ লাখের মতো বাংলাদেশি অভিবাসী সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মার্চ মাসে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে থাকা সৌদি আরর থেকে এসেছে ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। দ্বিতীয়তে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ৩০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ২১ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আরব আমিরাত থেকে পাঠিয়েছে ১৮ কোট ৪১ লাখ ডলার। এ ছাড়া মার্চে কুয়েত থেকে এসেছে ১৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলার, কাতার ১১ কোটি ৯৫ লাখ, ইতালি ৮ কোটি ৫৪ লাখ, মালয়েশিয়ার থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৮ কোটি ১৪ লাখ, ওমান থেকে পাঠিয়েছেন ৭ কোটি ৪৩ লাখ এবং বাহরাইন থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে প্রবাসীরা ১৮৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের মাসের চেয়ে ২৪ শতাংশ বা ৩৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বেশি। গত ফেব্র‚য়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৯ কোটি ডলার। তবে চলতি বছরের ফেব্র‚য়ারির তুলনায় মার্চে রেমিট্যান্স বাড়লেও গত বছরের একই সময়ের তুলনা করলে তা কমেছে। মার্চ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে ১৮৫ কোটি ৯৯ লাখ (১.৮৬ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের এ অঙ্ক আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৩ শতাংশ কম। গত বছরের মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯১ কোটি ৯ লাখ ডলার।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯ মাসে (জুলাই-মার্চে) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫২৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ২০ পয়সা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা)। এ অঙ্ক আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩০ কোটি বা প্রায় ১৮ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম ৯ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৮৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন ছিল। ঐ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিয়ে আসছে সরকার। চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে সরকার রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, রেমিট্যান্সের ওপর ভতুর্কি দেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আড়াই শতাংশ ভতুর্কি দেওয়ার কারণে এ দেশ থেকে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে। আর অগ্রণী ব্যাংক রেমিট্যান্সের ওপর আরো ১ শতাংশ বেশি ভতুর্কি দিচ্ছে। অর্থাত্ কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠায়, তাহলে সে ১০৩ ডলার ৫০ সেন্ট পাচ্ছে। আবার এ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র পাঠিয়ে একইভাবে আবার পাঠালে বাড়তি অর্থ পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ভতুর্কি থেকে অর্থ উঠিয়ে নিচ্ছে বলে ধারণা করছেন তারা।