দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনেকের। এটা যদি যুক্তরাষ্ট্রে হয় তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু সেই স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য কজনেরই বা ভাগ্যে জোটে। তবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আশার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। যার নাম ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’। তবে অবাক করার বিষয় হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিক একজন বাংলাদেশি। দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটিতে গর্ব করার মতো এই উদ্যোগ নিয়েছেন প্রকৌশলী আবুবকর হানিপ।
এই বাংলাদেশি মার্কিন নাগরিক জানান, এরইমধ্যে তার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশিরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। বছরে তাদের কারও কারও বেতন এক থেকে দেড় লাখ ডলারের মতো।
তথ্যপ্রযুক্তি, সাইবার সিকিউরিটি ও এমবিএ কোর্সে ১২১টি দেশের হাজারের বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। যার অর্ধেকের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। কারণ এখানে তাদের জন্য রয়েছে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শিক্ষাবৃত্তিও রয়েছে। গত এক বছরে ৫০০ এর বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এখানে পড়তে এসেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আই গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’। পরে বিশ্ববিদ্যালয়টি ১০০ কোটি টাকায় কিনে নেন আবুবকর হানিপ। এরপর এর নাম হয় ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।’ আবুবকর হানিপ বিশ্ববিদ্যালয়টির চ্যান্সেলর।
২০২১ সালে যখন এর যাত্রা শুরু হয় তখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩০০। দুই বছরের কম সময়ে সেই সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক হাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই গেছেন ৫শ’র বেশি শিক্ষার্থী।
আবুবকর হানিপ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে ক্লাস নিচ্ছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলভিত্তি হলো কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষায় পাঠদান। এখানে পড়ালেখা শেষ করে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন।
‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’তে পড়াশোনা করছেন মাহমুদ মেনন খান। বাংলাদেশি এই শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের যারা শিক্ষক রয়েছেন তারা তাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব অভিজ্ঞ। একই সঙ্গে তারা আবার স্কলার। ফলে তাদের ইন্ডাস্ট্রি জ্ঞান ক্লাসরুমে শেয়ার করেন। এতে আমরা আরও সমৃদ্ধ হই।
বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে অনেকে কর্মক্ষেত্রে সফল হলেও এর যাত্রার পেছনের গল্পটা সহজ ছিল না। কারণ আবুবকর হানিপ শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে স্নাতক করে তিনি যান যুক্তরাষ্ট্রে।
দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপীঠের সনদ থাকার পরও কেবল দক্ষতার অভাবে ঘণ্টায় মাত্র পাঁচ ডলার মজুরিতে কাজ করেছেন ভিনদেশে। এই কষ্টের অভিজ্ঞতা হানিপকে অনুপ্রাণিত করে। এরপর তিনি পিপলএনটেক নামে একটি দক্ষতা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সবশেষ চালু করেন পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুবিধা দেওয়াই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানান আবুবকর হানিপ।
তিনি বলেন, আমাদের টিউশন ফি খুবই সহনীয়। যেমন মাস্টার্স করলে দুই বছরে ২২ হাজার ৬০০ ডলার লাগে। তবে যদি বৃত্তি পায় এই খরচ কমে আসে। সেক্ষেত্রে দুই বছরে ১৫ হাজার ডলার প্রয়োজন হয়।
পড়াশোনার পাশাপাশি যেন চাকরি করা যায় সেই সুযোগও শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ।
তিনি জানান, ওয়াশিংটনে নিজস্ব ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টি নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৩শ কোটি টাকা।