সেন্ট লুইসের সেন্টেনিয়াল খ্রিস্টান চার্চে টর্নেডো আঘাত হানলে গির্জার অংশবিশেষ ধসে পড়ে। সেখানে আটকে পড়া তিনজনকে উদ্ধার করা হলেও, গির্জার বহুদিনের সেবাকর্মীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই খবরে গির্জার পাস্টর ডেরিক পারকিনস বলেন, “আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম—হৃদয় ভেঙে গেছে। শুধু গির্জা নয়, পুরো সম্প্রদায়ের জন্যই এটা বড় ক্ষতি।”
কেনটাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেসিয়ার জানিয়েছেন, রাজ্যে অন্তত ১৮ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ১৭ জন লরেল কাউন্টিতে। মৃতদের বয়স ২৫ থেকে ৭৬ বছরের মধ্যে। গভর্নর আরও বলেন, “আমি আশঙ্কা করছি, এমন কিছু ব্লক আছে যেখানে হয়তো সবাই মারা গেছেন।”
মিসৌরিতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচজন সেন্ট লুইসে এবং দুইজন স্কট কাউন্টিতে। শহরের মেয়র কারা স্পেন্সার বলেন, “এটি শহরের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ঝড়। ক্ষয়ক্ষতি হৃদয়বিদারক।”
ভার্জিনিয়াতেও ঝড়ের কবলে পড়ে দু’জন প্রাণ হারিয়েছেন, গাছ গাড়ির ওপর পড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
কেনটাকির লন্ডন শহরের লন্ডন-কর্বিন বিমানবন্দরে ঝড়ে হ্যাঙ্গারগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে, একটি বিমান উল্টে গেছে। আশপাশের বাড়িগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
জেফ করনেট নামে এক বাসিন্দা বলেন, ঝড়ের সময় তিনি বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন, কিন্তু টর্নেডোর শক্তিতে তিনি সেখানে থেকেও ছিটকে পড়েন। মাথায় আঘাত পেয়ে তাকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকতে হয়। পরে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে তার কপালে কয়েকটি সেলাই লাগে।
ঝড়ের আগাম সতর্কতা ও সরকারি প্রতিক্রিয়া
শনিবার সকাল পর্যন্ত জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, তারা ২৬টি টর্নেডোর প্রাথমিক তথ্য নিশ্চিত করেছে, যেগুলোর বেশিরভাগই ইন্ডিয়ানা ও কেনটাকিতে হয়েছে। ২ এপ্রিল ১০৭টি টর্নেডোর রেকর্ড হলেও এই সপ্তাহের ঝড় তাণ্ডব চালিয়েছে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে।

এদিকে ঝড়ের সময় পূর্ব কেনটাকির পূর্বাঞ্চলে দায়িত্বে থাকা জাতীয় আবহাওয়া অফিসে আবহাওয়াবিদ সংকট দেখা দেয়। তবে শুক্রবার রাতে জরুরি পরিস্থিতিতে সব কর্মী একসঙ্গে কাজ করেন এবং ১১টি টর্নেডো সতর্কতা জারি করা হয়।
আসন্ন আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আগামী রোববার থেকে সোমবারের মধ্যে আরও একটি ঝড়ো আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা দক্ষিণ গ্রেট প্লেইনস ও টেক্সাসের ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ এলাকায় বড় আকারের শিলা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া নিয়ে আসতে পারে।
সরকারি তহবিল সংকট ও প্রতিক্রিয়া
এই দুর্যোগের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলো কর্মী ও বাজেট সংকটে পড়েছে। তবুও কেনটাকি ও মিসৌরির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফেডারেল সহায়তার জন্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে।

গভর্নর বেসিয়ার বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাজনীতি চলতে পারে না। হোয়াইট হাউস ও ফেমা যেভাবে সাড়া দিয়েছে, আমরা সন্তুষ্ট।”