বুধবার (৩১ জানুয়ারি) প্রথম পর্যায়ের এই খনন শেষ হচ্ছে। এই খননে প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হয়েছে এবং প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে আরও খননের পর বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন জানান, ধনপোতা ঢিবিতে গত ৩ ডিসেম্বর খনন শুরু হয়। সেখানে প্রাচীন স্থাপনার নির্দশন পাওয়া গেছে। ৩১ জানুয়ারি এই পর্যায়ের খনন শেষ হচ্ছে। এরপর এটিকে ভরাট করে রাখা হবে। পরবর্তীতে পুণরায় খনন করা হবে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনটি কোনো বাসস্থান ছিল না। তবে খনন ও গবেষণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসলে বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, গুপ্তধনের ঢিবিতে পাওয়া ইটের সঙ্গে মণিরামপুরের দোনার অঞ্চলের দমদম পীরের ঢিবি ও কেশবপুরের ভরতভায়নার দেউল ঢিবির অনেক মিল রয়েছে। তাদের ধারণা, এখানকার স্থাপনাগুলো এক হাজার থেকে বারোশ বছর আগের নিদর্শন।
স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার সরকার জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে একবার এ ঢিবিটি খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। সেখান থেকে তিনি এক মণ ওজনের একটি পাথর পেয়েছিলেন।
ধনপোতা ঢিবিটির বর্তমান মালিক খেদাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পঙ্কজ বিশ্বাস। পঙ্কজ বিশ্বাসের ছেলে কলেজপড়ুয়া ছাত্র প্রতাপ বিশ্বাস জানান, ৫৭ শতক এলাকার ঢিবিটি তাদের ঠাকুর দাদাদের পৈত্রিক সম্পদ। তাদের সাত পুরুষ ওই ডিবিতে কোনো বসতি দেখেননি। পরিত্যক্ত ঢিবিতে ঝোপঝাড়ে ভরে যায়। আশপাশের বসতির গবাদিপশুর খাদ্য ও রান্নার জ্বালানির জোগান হয় এই বাগান থেকে।
এদিকে, বিরাট রাজার ধনপোতা বা গুপ্তধনের ঢিবি খননের খবর জানজানি হলে প্রাচীন নিদর্শন দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে উৎসুক লোকের ভিড় হচ্ছে। আশপাশে হরেক রকমের দোকানও বসেছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্র আরও জানায়, ঐতিহ্যের যশোরে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাচীনকালের বিভিন্ন সময়ের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খ্রিষ্টিয় ৭-৮ দশকে নির্মিত কেশবপুর উপজেলার ভরতভায়নার ভরত রাজার দেউল, একই উপজেলার মির্জানগরের মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে নির্মিত হাম্মামখানা, সাগড়দাঁড়ি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈত্রিক বাড়ি, মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে তৈরি শেখপুর জামে মসজিদ, মণিরামপুর উপজেলায় সেনা বা সুলতানি আমলের দমদম পীরের ঢিবি, ঝিকরগাছা উপজেলায় সুলতানি আমলের নিদর্শন কায়েমকোলা মসজিদ, অভয়নগর উপজেলায় খানজাহান আলী মসজিদ, ১১ শিবমন্দির, যশোর শহরের চাঁচড়া শিবমন্দির, হাজি মোহাম্মদ মহসিন ইমামবাড়া। উল্লিখিত প্রতিটি স্থাপনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীন সংরক্ষিত।