যশোরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যের হাতে দুই তরুণ-তরুণীর অমানসিক নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে তিনদিন আগে ১৫ মার্চ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৭টার দিকে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ১৮ মার্চ মেয়েটির বাবা যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলার পর অভিযুক্ত ইউপি মেম্বরসহ চারজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ইউপি মেম্বর আনিচুর রহমান, সদরের আব্দুলপুর গ্রামের ভুট্টো, আজিম আলী ও তৌহিদ হাসান। নির্যাতনের শিকার ওই তরুণ-তরুণী যশোর সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের বাসিন্দা। তারা একে অন্যের নিকট আত্মীয় বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। আর অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় আমার মেয়ে আত্মীয় এক যুবকের মোটরসাইকেলে করে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামে ওয়াজ মাহফিল শুনতে যায়। পরে ফেরার পথে তাদের গতিরোধ করে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে এনে দুইজনকেই অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকেন ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান, তার সহযোগী আইযুব আলী, ভুট্ট, আব্দুল আলীমসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জন। একপর্যায়ে তাদের দু’জনকে নিয়ে একটি দোকানের ভেতরে বেধড়ক মারধর করতে থাকেন তারা। তিনি অভিযোগ করেন, তাদের দু’জনকে বিনা দোষে অমানবিক নির্যাতন করেছে।
এদিকে ১৫ মার্চের ঘটনার ভিডিও চিত্র ১৮ মার্চ (শুক্রবার) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ড এবং ৪৪ সেকেন্ডের দুটি ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি দোকানে অর্ধশতাধিক মানুষের সামনে তরুণীকে এলোপাতাড়ি জুতাপেটা করছেন ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান। ওই তরুণী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ইউপি সদস্যের পাশে থাকা কয়েক যুবক লাথিও দেন। অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে তরুণীর সঙ্গে থাকা যুবককেও এলোপাতাড়ি মারধর করেন ইউপি সদস্য ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন যুবক।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক যুবক তরুণীর হাত ও পা ধরে রেখেছে। এরপরে ইউপি সদস্যদের সঙ্গে থাকা আইয়ুব, ভুট্ট আর আব্দুল আলীমসহ তিন থেকে ৪ জন লাঠি দিয়ে তরুণীকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই যুবককেও একইভাবে লাঠি দিয়ে পেটান তারা। নির্যাতনের শিকার তরুণ-তরুণী বারবার ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও তারা কোন কথায় কর্ণপাত কররেনি। অনেককে দুই তরুণ-তরুণীকে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার কথাও বলতে শোনা গেছে ভিডিও দুটিতে। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ১৮ মার্চ তরুণীর বাবা যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিচুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র ডিবি ওসি রূপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর মেয়েটির বাবা যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে যশোর কোতোয়ালি পুলিশ ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ইউপি মেম্বরসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। ‘ভাইরাল ভিডিও অনুযায়ী নির্যাতনকারী ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান’ সেটা নিশ্চিত করে চুড়ামনকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন বলেন, মেয়েটির বিরুদ্ধে আগেও অনেকবার অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে। ভিডিওটি ভাইরাল হলে আমি মোবাইলে ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছি, সত্য ঘটনাটি জানার জন্য। মেয়ে ও ছেলেটি যদি অন্যায় করেও থাকে তাহলে এভাবে নির্যাতন করা উচিত হয়নি। ইউপি সদস্য অন্যায় করেছেন।