আমন মৌসুমের শুরুতেই এবার ধান, চালের বাজার চড়া। গত বছর আমন মৌসুমের শুরুতে কাঁচাভেজা কাটারিভোগ ধানের মণ ছিল ১ হাজার ২৮০ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকার মধ্যে। সেই ধান এবার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। হাটবাজারে ব্রিধান-৫১ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩২০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। গত বছর এ ধানের দাম ছিল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০ টাকা।
গত রবিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দুর্ভিক্ষ আসছে এই আতঙ্কে কেউ যেন তার চাহিদার তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি খাদ্য কিনে মজুত না করে। তা হলে গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ আসবে না।
সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও নওগাঁর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আমন ধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট আবাদের প্রায় ২৫ শতাংশ কাটা ও মাড়াই শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। এবার মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপণ করতে হয়েছে। তাই ফলন নিয়ে শুরুতে কৃষকরা এক ধরনের দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকলেও এখন তা কেটে গেছে।রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা দীপক কুমার কর জানান, ধানের আশানুরূপ ফলন হওয়ায় অধিকাংশ কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। এই উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন জানান, তিনি ১৪ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেছেন। ধানের জাতের মধ্যে রয়েছে ব্রিধান-৯০, ব্রিধান-৪৯, স্বর্ণা-৫ ও ব্রিধান-৩৪। এ পর্যন্ত চার বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। ফলনের পাশাপাশি ধানের বাজারও ভালো। ফলনের বিষয়ে চান্দাইকোনা ইউনিয়নের চান্দাইকোনা গ্রামের কৃষক রোকনুজ্জামান সবুজ ও সিমলা গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম একই তথ্য জানালেন।
ধান-চালের বাজার চড়া
এবার মৌসুমের শুরুতেই দেশের হাটবাজারে আমন ধানের দাম চড়া। গত বছরের তুলনায় প্রতি মণ ধানে প্রায় ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি। বর্তমানে রায়গঞ্জের হাটবাজারে কাঁচাভেজা কাটারিভোগ ধান ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর ছিল ১ হাজার ২৮০ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকা। ব্রিধান-৪৯ এবার ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ ধানের দাম ছিল ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ৭০ টাকা। এছাড়া ব্রিধান-৫১ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩২০-১ হাজার ৩৫০ টাকা। যা গত বছর ছিল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০ টাকা। স্বর্ণা-৫ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০-১ হাজার ৪৫০ টাকা। গত বছর এ ধানের দাম ছিল ১ হাজার ৩০-১ হাজার ৫০ টাকা মণ ।
ধানের এই বাড়তি দরের কথা জানালেন সিরাজগঞ্জ জেলা চাউলকল মালিক সমিতির সহসভাপতি উপজেলার চান্দাইকোনা এলাকার মেসার্স অন্তিম সেমি অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মো. গোলাম মোস্তফাও। তিনি জানান, বাজারে ধানের বেশ টান লক্ষ করা যাচ্ছে।
নওগাঁ প্রতিনিধি তন্ময় ভৌমিক জানান, নওগাঁয় সপ্তাহের ব্যবধানের পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে চালে দাম বেড়েছে দুই টাকা থেকে পাঁচ টাকা। বড় বড় মিলার ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে ধান, চাল কেনায় এই অবস্থা বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে মিলাররা বলেছেন, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়ে গেছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এ কে এম মনজুরে মাওলা জানান, নওগাঁয় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়া ভালো থাকায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৫ ভাগ জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। রোগবালাই তেমন না থাকায় আবাদ ভালো হওয়ায় ১০ লাখ মেট্রিকটন ধান উত্পাদন হবে বলে আশা রাখা হচ্ছে।
নওগাঁ কৃষক আন্দোলনের নেতা মহসিন রেজা জানান, আমন ধান কাটা মাড়াইয়ের ভরা মৌসুমে ধান-চালের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় করপোরেট ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটের অভিযোগ অস্বীকার করে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, করপোরেট ব্যবসায়ীদের হাজার হাজার কোটি টাকায় ব্যবসা শুরু করায় অর্থনৈতিকভাবে পেরে উঠতে পারছে না হাসকিং ও অটো রাইস মিলরা। করপোরেট ব্যবসায়ীদের কারণে জেলার ১ হাজার ১০০ হাসকিং মিল অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে অটো রাইস মিলেও বেহাল দশা শুরু হয়ে গেছে। করপোরেট ব্যবসায়ীদের কারণে ধান-চালের বাজার বেড়ে গেছে।