শেষ উইকেটে দরকার ছিল ৫১ রান। একজন আউট হলেই শেষ। একদিকে ব্যাটিং জানা মিরাজ; খেলছিলেন আস্থার সঙ্গে। তাতে কি? অন্যপ্রান্তে মোস্তাফিজুর রহমান মূলতঃ বোলার। তিনি কী টিকে থাকতে পারবেন? নাকি আউট হয়ে যাবেন? ভক্ত-সমর্থক সবার চিন্তা ছিল এমনই।
সঙ্গী মিরাজও কি সে চিন্তা করেননি? তারও কি মনে হয়নি, আমি একদিকে যতই চালিয়ে খেলি না কেন, মোস্তাফিজ যদি আউট হয়ে যায়, তাহলেই তো সব শেষ হয়ে যাবে।
মিরাজও তেমনটাই ভেবেছেন। কিন্তু তাকে অভয় দিয়েছেন মোস্তাফিজ। তাকে নিয়ে চিন্তা না করে নিজের খেলা খেলার পরামর্শও দিয়েছেন কাটার মাস্টার। ‘আমাকে শুধু একটা কথা বলছিল, সাহস দিচ্ছিল ও শুধু বলছিল আমি ওকে নিয়ে যেন টেনশন না করি।’
ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পর নিজের অনুভুতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সঙ্গী মোস্তাফিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মিরাজ বলেন, ‘মোস্তাফিজ আমার খুব ভালো বন্ধু এবং ও খুব ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। একটা জিনিস আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে যে, ও খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল। সে আমাকে একটা কথা বারবার বলছিল, আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্ত করার কিছু নেই। ঠেকিয়ে দিচ্ছিল বল, মানে আউট হব না। যদি গায়ের ওপর বল লাগে সমস্যা নেই; কিন্তু আউট হব না। ওর এই বিশ্বাস দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে এবং আমার আত্মবিশ্বাসটা বেড়েছে ওর আত্মবিশ্বাস দেখে।’
মোস্তাফিজ আরও একটা কথা বারবার বলেছেন মিরাজকে। তা জানাতেও ভোলেননি মিরাজ, ‘এখন তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। ছক্কা মারার দরকার নেই। নিচে নিচে গ্যাপে খেললে রান পাব। আমিও ওইভাবেই চিন্তা করেছি। আমার গেম প্ল্যান নিয়ে অনেক বেশি পরিস্কার ছিলাম যে আমি কী করব। আলহামদুলিল্লাহ সেটি খুব ভালো হয়েছে।’
নিজের ইনিংসটি সাজানো নিয়ে মিরাজের ব্যাখ্যা, ‘আমি নিজের মত করে ইনিংসটি সাজিয়েছি। কোনো বোলারকে ঝুঁকি নিব, কাকে মারব, কোন দিকে মারব- আমি নিজে নিজে পরিকল্পনা করেছি।’
মিরাজ আরও যোগ করেন, তিনি সব বল মারতে যাননি। মরিয়া হয়ে ব্যাট চালাননি। ‘আমি সব চালাইনি। নিজের নাগালে যা পেয়েছি তাকেই আক্রমণ করেছি। যদি সব বলে চালাতাম তাহলে কিন্তু আউট হওয়ার ব্যাপার থাকতো। আমি কিন্তু দুটি বল উপরে উঠিয়ে দিয়েছি। চান্সও দিয়েছি ওরা কিন্তু চান্স নিতে পারিনি। সব বল মারতে গেলে তো আউট হতেই হবে আপনাকে। ক্যালকুলেটিভ রিস্ক নিয়ে যদি খেলেন তাহলে খুব ভালো হয়।’
প্রসঙ্গতঃ ভারতীয় পেসার দিপক চাহারের বলে ১২ রানের মাথায় আকাশে বল তুলে দিয়েছিলেন মিরাজ। উইকেটকিপার লোকেশ রাহুল ফাইন লেগে ছুটে গিয়ে তা ধরেও ফেলে দেন। জীবন পাওয়া মিরাজ শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে ৩৮ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফিরে পান ম্যাচ সেরার পুরস্কার ।