খন্দকার মোশকাত ও জিয়াউর রহমানের নির্দেশ ও পরিকল্পনাতেই ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মিটিংয়ের কথা বলে তারা ঢুকতে চায়। কিন্তু তাদের সঙ্গে অস্ত্র ছিল। জিয়া এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বলেই মোশতাক যখন রাষ্ট্রপতি হলো, নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েই জিয়াউর রহমানকে বানাল সেনাপ্রধান। কাজেই মোশতাকের পতনের সঙ্গে সঙ্গে জিয়ার হাতে সমস্ত ক্ষমতা চলে এল।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ৮০ দিনের মাথায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় বন্দি থাকাকালীন হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। গুলি করে ও বেয়নেট বিদ্ধ করে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ও দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে।
২৯ বছর পর এই হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ শুরু হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর তিনজন পলাতক সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড ও ১২ জন সেনা কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্তদের কয়েকজন এখনো পলাতক আছেন।
৪৭ বছর আগের বর্বরোচিত ওই হত্যাকাণ্ড উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানের নির্দেশেই জেল হত্যাকাণ্ড হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের হাতে তৈরি দল বিএনপিও অবৈধ বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, যে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সে কীভাবে গণতন্ত্রের প্রবর্তক হয়।
জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতির সুযোগ করে দিয়েছিলেন মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি শুধু দেশকে ধ্বংস করেনি, দলটি দেশের রাজনীতিও ধ্বংস করেছে।
নেতাকর্মীদের সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের মাঝে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতা সরকারের গঠন করার পর এই পর্যন্ত যত উন্নয়ন আমরা করেছি সেগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। মানুষকে মনে করে দিতে হবে- কী ছিল আর কী হয়েছে। যার পায়ে একটা রাবারের চপ্পল ছিল না সে আজকে জুতা পরে। যে রাস্তা দিয়ে কাদার ওপর হাটতে হত, এখন সেখানে পাকা রাস্তা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘প্রত্যেকটা উপজেলায় সরকারি স্কুল কলেজ আমরা সরকারিকরণ করেছি। আমরা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত স্কুল করে দিয়েছি। প্রত্যেকটা স্কুলে মেয়েদের জন্য আলাদা আলাদা এবং ছেলেদের জন্য আলাদা বাথরুম করে দিয়েছি। প্রত্যেকটা জেলায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। আমরা স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু ১ উৎক্ষেপণ করেছি। ব্রডব্যান্ড সমস্ত বাংলাদেশে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক, বিনা পয়সায় ওষুধ দিচ্ছি, চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিচ্ছি। জেলা হাসপাতালগুলোকে উন্নত করে দিচ্ছি। আমরা আর কত বলব? বলতে গেলে বহু সময়! সময় নেই।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘আমাদের যে উন্নয়নের কথাগুলি আমাদের নেতাকর্মীদের কিন্তু বলতে হবে মানুষের কাছে। মনে রাখতে হবে সামনে আমাদের নির্বাচন। আমরা মানুষের মন জয় করে মানুষের জন্য কাজ করব। আবার নৌকা মার্কায় মানুষ ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ থাকলেন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। বিএনপি এলে লুটপাট, খুনখারাবি, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা এই নির্যাতন আসবেন। অশান্ত পরিবেশ এদেশের মানুষ চায় না। মানুষ শান্তি চায়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘মানুষ আওয়ামী লীগকেই চায়। মানুষ জানে আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন, মানুষের জীবন পরিবর্তন, উন্নয়নের ধারা। আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা থেকে শুরু করে সামাজিক নিরাপত্তা টাকা দিচ্ছি। আমরা প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। প্রাইমারি বৃত্তির টাকা দিচ্ছি। আরও উন্নত শিক্ষার জন্য আলাদাভাবে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড করে তার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় টাকা দিচ্ছি।’
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘যারা পদ্মা সেতু নিয়ে এত কথা বলেছেন, সেটাতো প্রমাণ হয়েছে যে দুর্নীতি হয়নি বরং পদ্মাসেতু হয়েছে। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি নিজের অর্থায়নের। বাংলাদেশ যদি নিজের টাকায় এত বড় প্রজেক্ট করতে পারে, সেই বাংলাদেশকে আর কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলে গেছেন, সেটাই আমরা প্রমাণ করেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’
আলোচনা সভায় ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।