ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ফিক্সড ইন্টারনেটের মতো মোবাইল ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ফিক্সড ইন্টারনেটের ‘একদেশ একরেট’ উদ্যোগের বাস্তবায়ন দেশে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। আমাদের এই কর্মসূচি বিশ্বে অনুকরণীয় একটি উদ্যোগ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে এ বছর বাংলাদেশ অ্যাসোসিও বৈশ্বিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম আয়োজিত রেজিল্যান্ট ইন্টারনেট ফর সাসটেইন্যোবল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড স্মার্ট বাংলাদেশ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন।
বিআইজিএফ চেয়ারপার্সন এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রোজিনা নাসরিন, আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রেজুয়ানুর রহমান এবং বিআইজিএফ সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মাদ আব্দুল হক অনু বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান নির্বাহী এ এইচ এম বজলুর রহমান। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী পৃথিবীতে এখন পঞ্চম শিল্প বিপ্লব চলছে উল্লেখ করে বলেন, পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের সংযুক্তির মহাসড়কের নাম ফাইভ-জি প্রযুক্তি। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের পথ বেয়ে আমরা ফাইভ-জি যুগে প্রবেশসহ ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়ক গড়ে তুলছি। ডিজিটাল সংযুক্তির মহাসড়ক দিয়েই আমরা পঞ্চম শিল্প বিপ্লব করব।
১৯৯২ সালে বিনা মাশুলে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ গ্রহণ না করে তৎকালীন সরকার তথ্যযোগাযোগের মহাসড়ক থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক অপরিপক্কতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে ডিজিটাল যুগের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতায় ইন্টারনেট এখন মানুষের জীবনধারায় অনিবার্য একটি বিষয় হিসেবে জড়িয়ে আছে।
মন্ত্রী বলেন, জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে ইন্টারনেটের অবদান অপরিসীম। ইন্টারনেটের বিষয়ে রাজস্বের দিকে তাকালেই হবে না, সভ্যতার অগ্রগতির দিকে আমাদের সবার আগে লক্ষ্য রাখতে হবে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব আমরা অতিক্রম করেছি এখন আমাদের ৫ম শিল্প বিল্পবের প্রস্তুতি নিতে হবে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ১৯৭৩ সালে আইটিইউ ও ইউপিইউর সদস্যপদ অর্জন, টিঅ্যান্ডটি বোর্ড গঠন এবং ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাড়ে ১৮ বছরের শাসনামলে সেই বীজটিকে চারা গাছ থেকে আজ তা বড় গাছে রূপ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন এ দেশের একটিও শিল্প-কারখানা ছিল না। যে কয়টি ছিল সবগুলোর মালিক ছিল পাকিস্তানিরা। পাকিস্তানিরা যখন পালিয়ে যায়, তখন পরিত্যক্ত কারখানাগুলো সচল করার উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
গত ১৪ বছরে দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার ও ইন্টারনেট সংযোগ সম্প্রসারণে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচিত হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে দেশে মাত্র সাড়ে সাত জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহার করতো মাত্র সাড়ে সাত লাখ মানুষ। বর্তমানে তিন হাজার ৮৪০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউদথ ব্যবহৃত হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ২৭ লাখ অতিক্রম করেছে। তিনি জানান ২০০৮ সালে দেশে মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো চার কোটি, বর্তমানে ১৮ কোটি সিম ব্যবহৃত হচ্ছে।
সভাপতির বক্তৃতায় হাসানুল হক ইনু বলেন, টেকসই ইন্টারনেট একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য অপরিহার্য। অনুষ্ঠানে বক্তারা ইন্টারনেট বিকাশে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও ইন্টারনেট গতি বৃদ্ধি এবং সহজলভ্য করার বিষয়ে করণীয় বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।