১৯৮৬ থেকে ২০২২। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে পেরিয়ে গেছে ৩৬টি বছর। এর মাঝে স্বাদ নেওয়া হয়নি বিশ্বকাপ জয়ের শিরোপা। এমন হিসেব-নিকেশ পুঁজি করেই আয়োজক দেশ কাতারে এবার পা রেখেছিল লিওনেল মেসির দল। তবে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে সেই আশায় গুড়ে বালি হয়েছিল আলবেসেলিস্তাদের। কিন্তু পরক্ষনেই সেই প্রেক্ষাপট পাল্টে বিশ্বকাপে নিজেদের মেলে ধরতে শুরু করে লাতিন আমেরিকার দেশটি।
কাতারে বিশ্বকাপ মিশনের শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে আছেন দলের প্রাণভ্রোমরা লিওনেল মেসি। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচেই নিজে যেমন আলো ছড়িয়েছেন, ঠিক তেমনি সতীর্থদের দিয়েও করিয়েছেন গোল। এর সঙ্গে বেশ কয়েকটি রেকর্ডেও পা রেখেছেন ‘এলএমটেন’। গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার বাঁধা পেরিয়ে আজ আলবেসেলিস্তারা ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামছে। এই ম্যাচটিও মেসির জন্য অপেক্ষা করছে একগুচ্ছ রেকর্ড ছোঁয়ার হাতছানি নিয়ে। মালদিনি, বাতিস্তুতা, রাফা মার্কেজদের কীর্তি ছাপিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে মেসির সামনে। তবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের কাছে।
কাতারের রাজধানী দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে আজ রাত ১টায় সেমির লড়াইয়ে ক্রোয়েটদের বিপক্ষে মাঠে নামবে মেসির দল। এরমধ্যেই মেসি বিশ্বকাপের ম্যাচে ১০ গোল করে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন। দুই তারকারই এখন আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে গোলসংখ্যা ১০টি করে। মেসির এই ১০টি গোলের মধ্যে কাতারেই এসেছে চারটি গোল। বিশ্বকাপের ২০০৬, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২২ সংস্করণে গোল পেয়েছেন মেসি। তাই আজকের ম্যাচে যদি মেসি গোল করতে পারেন, তবে তিনি ছাপিয়ে যাবেন বাতিস্তুতাকে। সেক্ষেত্রে আলবেসেলিস্তাদের হয়ে বিশ্বকাপে এককভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হবেন মেসি।
তাছাড়াও এখন পর্যন্ত সাবেক জার্মান ফুটবলার মিরোস্লাভ ক্লোজার সঙ্গে মেসি বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক ‘ক্যাপড প্লেয়ার’। দুই জনেই বিশ্বকাপে খেলেছেন ২৪টি করে ম্যাচ। আলবেসেলিস্তা অধিনায়ক সেমিফাইনাল খেলতে নামলে তিনি ২৫তম ম্যাচ খেলার রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন। এর সঙ্গে টপকে যাবেন কিংবদন্তি জার্মান ফরোয়ার্ডকে।
অন্যদিকে জার্মানির লুথার ম্যাথাউস বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন। আজকের ম্যাচে মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে সেই রেকর্ডেও ভাগ বসাবেন মেসি। আর আর্জেন্টিনা যদি ফাইনালে পৌঁছায় বা তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচ খেলে, তবে ম্যাথাউসের রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার সুযোগ থাকবে ‘এলএমটেন’ এর সামনে।
বিশ্বকাপের ম্যাচে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক এখন পর্যন্ত ২,১০৪ মিনিট সময় ব্যয় করেছেন। কিংবদন্তি ইতালীয় ডিফেন্ডার ও এসি মিলান তারকা পাওলো মালদিনির ফিফা বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ২,২১৭ মিনিট খেলার রেকর্ড রয়েছে। আজকের ম্যাচ যদি অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়, তবে মালদিনির সেই রেকর্ড ভাঙ্গার সুযোগ আছে মেসির সামনে।
তাছাড়াও পাঁচটি বিশ্বকাপ আসরে অংশ নেওয়া ছয় জন ফুটবলারের মধ্যে মেসি একজন, যিনি যৌথভাবে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন। মেসির ও রাফা মার্কেজ ১৮টি বিশ্বকাপের ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজকের ম্যাচে সেই নজিরও ছাপিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে এই ‘ক্ষুদে জাদুকর’ এর সামনে।