অপেক্ষার প্রহর ঘুচিয়ে ঘটা করেই দেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে প্রথম যাত্রী হিসেবে টিকিট কেটে অতিথিদের নিয়ে মেট্রোভ্রমণও উপভোগ করেছেন সরকারপ্রধান। তবে রাজধানীর বুক চিরে ছুটে চলা এই গণপরিবহনে আজ চড়ার সুযোগ পাননি সাধারণ যাত্রীরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে জনসাধারণের জন্য খুলবে মেট্রোরেলের দুয়ার। ফলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এখন ‘চাতকের মতো’ আগামীকালের অপেক্ষায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
দেশের প্রথম মেট্রোভ্রমণ ঘিরে ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে যাত্রীদের জন্য বেশকিছু নির্দেশনা ও বিধিনিষেধও জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্বের অতিরিক্ত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ১০ গুণ বেশি ভাড়া আদায়ের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে মেট্রোরেল আইনে (২০১৫) বলা হয়েছে, অনুমোদিত দূরত্বের বেশি মেট্রোরেলে ভ্রমণ করলে বা ভাড়া এড়ানোর উদ্দেশ্যে অন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য মেট্রোরেলের যাতায়াতের ভাড়ার ১০ (দশ) গুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ড এবং তা অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
এছাড়াও ডিএমটিসিএল বলছে- মেট্রোরেলে চড়ার সময় সঙ্গে পোষা প্রাণী; যেমন- কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি বহন করা যাবে না। পাশাপাশি সঙ্গে রাখা যাবে না বিপজ্জনক বস্তু; যেমন- আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি, চাকু। এছাড়া স্টেশনে বা ট্রেনে ফেলা যাবে না থুথু কিংবা পানের পিকও। আর পাবলিক প্লেসের মতো মেট্রোরেলেও ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্ল্যাটফর্মে বসেও কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবে না।
এদিকে, কোনো ব্যক্তি অননুমোদিতভাবে মেট্রোরেলের টিকেট বা পাস বিক্রি বা জাল করলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ছাড়াও এক কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে আইনে। পাশাপাশি মেট্রোরেলে পরিদর্শককে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে বা মিথ্যা তথ্য দিলে সেটিকেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এমন কাজে অভিযুক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
অন্যদিকে, মেট্রো বা ট্রেন ছাড়াও স্টেশনের কিছু এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে যদি কেউ ওইসব স্থানে অনুমতি ছাড়েই প্রবেশ করে তবে এটিকে অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। এমনকি প্রবেশের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনুরোধেও যদি কেউ ওইসব এলাকা ত্যাগ না করেন তাহলে নিশ্চিত শাস্তির মুখে পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে মেট্রোরেল আইনে।
এছাড়াও কোনো ব্যক্তির কারণে যদি মেট্রোরেল বা যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় বা বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়, তবে ওই ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দণ্ডিত হতে পারেন। পাশাপাশি অনুমতি ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করলে ১০ বছরের সাজা ও এক কোটি টাকা জরিমানা, পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করলে দুই বছরের সাজা ও ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে আইনে।
এদিকে, মেট্রোরেল নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে মেট্রোরেল আইনে। পাশাপাশি কারিগরি মান অনুসরণ না করে মেট্রোরেল নির্মাণ ও রোলিং স্টক স্থাপন, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থাপনা সম্পাদনা করলে পাঁচ বছরের বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
সর্বোপরি মেট্রোরেল আইনে উল্লিখিত কোনো অপরাধের জন্য কেউ দণ্ডিত হওয়ার পর আবারও একই অপরাধ করলে তার জন্য সর্বোচ্চ যে দণ্ড, এর দ্বিগুণ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে আইনে।