প্রাণঘাতী করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে হার মানলেন ভারতীয় অভিনেতা রাহুল ভোহরা। মৃত্যুর ১দিন আগেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, করোনা তাকে কেড়েই নেবে। তাই মৃত্যুর ২৩ ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রীকে ট্যাগ করে ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন রাহুল। যা রীতিমতো ভাইরাল। গত দুই দিনেই ৫০ হাজারের বেশি রিয়েক্ট জমা পড়েছে তাতে। পোস্টাটি শেয়ার হয়েছে প্রায় ৭০০০ বার। ১৬ হাজারের বেশি মন্তব্য জমা পড়েছে পোস্টের নিচে।
অনেকের মতে, করোনাযুদ্ধে হেরে গেলেও মৃত্যুর আগে করা পোস্ট দিয়ে অভিনেতা রাহুল প্রমাণ করে গেলেন যে, ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটা অসহায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কাছে। কতটা ভেঙে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ট্যাগ করে শনিবার রাহুল লিখেছিলেন, ‘আমি যদি ভালো চিকিৎসা পেতাম, তাহলে বেঁচে যেতাম। চিকিৎসা নেই, অর্থ নেই। এখন আমি সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। খুব শীঘ্রই জন্ম নেব। অনেক ভাল ভাল কাজ করব। এখন যেন আর সাহস নেই আমার মধ্যে।’
পোস্টের সঙ্গে কোন হাসপাতালের কত তলায়, ওয়ার্ড নম্বর, বেড নম্বর— সব তথ্য লিখে দিয়েছিলেন রাহুল। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে বাঁচার আকুতি নিয়ে এভাবেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন ৩৫ বছর বয়সে প্রয়াত এই অভিনেতা। অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই চিকিৎসা সহায়তায় ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন রাহুল।
এর আগের পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি কোভিড পজিটিভ। হাসপাতালে সাধারণ বেডে ভর্তি আছি। চার দিন হতে চলল আমার কোনো উন্নতি নেই। আমার আইসিইউ দরকার। আমার অক্সিজেন লেবেল ক্রমশ কমছে। আর আমাকে দেখভালের কেউ নেই। আমি নিতান্তই অসহায় হয়ে এই পোস্ট করছি। কারণ, বাড়ির লোকেরা আর পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।’
কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হলে ভারতের তাহিরপুরের রাজীব গান্ধী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রাহুলকে। অবস্থার অবনতি ঘটলে গত শনিবার সন্ধ্যাবেলায় তাকে দিল্লিতে দ্বারকায় আয়ুষ্মান হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা করা যায়নি। অক্সিজেন ও যথাযথ চিকিৎসার অভাবে রোববার মৃত্যু হয় তার।
রাহুলের এই অকাল মৃত্যুতে নিজেকে হত্যাকারী বলে দুষলেন উত্তরাখন্ডের নাট্যকার অরবিন্দ গৌড়। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে রাহুলের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে অরবিন্দ লিখেছেন, ‘রাহুল ভোহরা চলে গেল। আমার প্রিয় প্রতিভাবান অভিনেতা আর নেই। গতকালই রাহুল বলেছিল যে ভালো চিকিৎসা পেলে সে বেঁচে যেত। সুচিকিৎসা হলো না, বাঁচানো গেল না। রাহুল, আমরা তোমাকে বাঁচাতে পারলাম না। ক্ষমা করে দিও। আমি তোমার হত্যাকারী।’ রাহুল ভোহরা ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ‘অস্মিত নাট্যগোষ্ঠী’র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। উত্তরাখন্ডের মঞ্চ নাটকের পর ডিজিটাল দুনিয়ায় কাজ করেছেন। বেশ কিছু ওয়েব সিরিজে দেখা গেছে তাকে।