বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এই বাজেট অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে। সরকারের সাথে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি বাংলাদেশের সকল শ্রেণির মানুষের সহায়তা কামনা কামনা করেছেন। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এই বাজেট স্মার্ট, সমৃদ্ধ এবং সুষম বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা পালন করবে।
শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘সমৃদ্ধ ও সুষম বাজেট নির্মাণ : বাজেট ২০২৩-২০২৪’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এটির আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষণাভিত্তিক সংগঠন ‘এডুকেশন, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি)’। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ও ইআরডিএফবি’র সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার।
ড. আতিউর রহমান বলেন, বর্তমান বাজেট মূলত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বাজেট। ২০০৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। যেমন কৃষির আকার বেড়েছে ৪ গুণ, রফতানি বেড়েছে ৫ গুণ, রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬ গুণ। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হয়েছে। কোভিডের মত কঠিন পরিস্থিতিতে ও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৯৭১ এ যা ছিল তা থেকে প্রায় ৩০ গুণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৮০০ মার্কিন ডলার।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের সফল বাজেটের ফলে দারিদ্র্যতা এবং অতি দারিদ্রতা কমে হয়েছে ১৮.৫ এবং ৫.৬ শতাংশ। বর্তমানে বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়েছে যা মূলত সরকারের উৎসাহের ফলেই হয়েছে। তার মতে এই বাজেট কোনোভাবেই উচ্চাভিলাষী নয় বরং ভবিষ্যতমুখী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ইআরডিএফবি কর্তৃক আয়োজিত এমন একটি সেমিনার নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। উক্ত প্রতিষ্ঠানে লক্ষ ও উদ্দেশ্য বর্তমান বাজেটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর সাথে সম্পর্কিত। বর্তমান বাজেট শিক্ষা, গবেষণা এবং উন্নয়ন এই ৩টি জিনিসের সমন্বয় ঘটিয়ে স্মার্ট, সমৃদ্ধ এবং সুষম বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক হবে। বাজেটে কৃষিখাতে অনেক বেশি জোর দেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করছে যে উক্ত বাজেট স্মার্ট কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে স্মার্ট এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, বাজেট ঘোষণা করলেই হবেনা বরং বাজেটের যথাযথ ব্যবহার আমাদের করতে হবে। বাংলাদেশের সকল সেক্টরে প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর জোর দিয়ে বর্তমান বাজেট মূলত স্মার্ট, সমৃদ্ধ এবং সুষম বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।
ইআরডিএফবি কর্তৃক আয়োজিত এমন একটি অনুষ্ঠান স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস এবং এই সেমিনার আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান বাজেট নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে। শেখ হাসিনার যোগ্য সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের মেধার গুণে কাগজহীন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমান বাজেটে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, এসএমই সহ সকল সেক্টরে গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেক গতি আনতে সহায়ক হবে।
বর্তমান বাজেটের যে ছোট কিছু জায়গা গুলোতে পরিবর্তন আনলে তা আরও বেশি যুক্তিযুক্ত হবে তাতে সরকারকে পুনর্বিবেচনার জন্য আহবান জানান তিনি।
তিনি বলেন, স্মার্ট, সমৃদ্ধ এবং সুষম বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ সমাজকে কাজে লাগাতে হবে বলে বিশ্বাস করেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, ছেড়া এবং ময়লা লুঙ্গি পরা বাঙালি গেরিলা যোদ্ধাদের দীর্ঘ ৯ মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে অর্জিত এই সোনার বাংলায় বর্তমান সরকারের ঘোষিত বাজেটে এই প্রান্তিক মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে করা হয়েছে। এই বাজেট নিঃসন্দেহে তাদের কল্যাণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে। বঙ্গবন্ধু যেমন বাংলাদেশের সংকটে নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এমন আপদকালীন সময়েও এমন জনকল্যাণমুখী বাজেট নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। শেখা হাসিনা বাংলার মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন দিয়ে তার সংগ্রাম শুরু করে আজ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে চলছে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে। এই বাজেট স্মার্ট, সমৃদ্ধ এবং সুষম বাংলাদেশ গঠনে অপরিসীম ভূমিকা পালন করবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ইআরডিএফবি এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য ও ইআরডিএফবি এর সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান।